এম. রহমান
(আবু নকীব চাচার “ইসলামী আন্দোলনে হীনমন্যতাবোধের সুযোগ নেই” লিখার সম্পূরক লিখা।)
ইসলাম ও ইসলামি আন্দোলন নিয়ে কথা বলা
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ । সামাজিক, পারিপার্শ্বিক, রাজনৈতিক ও
বুদ্ধিবৃত্তিক সকল দিক থেকেই তা লস প্রজেক্ট। ইসলাম বিষয়ক কথা বললে যে শুধু
প্রথম আলো এন্ড কোংরাই রাগান্বিত হন তাই নয়, ইসলাম পন্থী সার্কেলে ইসলাম
বিষয়ক কথা বলাও আজ বড় ঝক্কি-ঝামেলার বিষয়। ‘ইসলাম’ বিষয়ক কথা তো বলায় শোভা
পায়না জ্ঞানের অভাবে, কিন্তু ইসলামের জ্ঞান কিভাবে সমাজে বাড়ানো যায়,
অভিজ্ঞতাসঞ্জাত পুঁটুলি হতে একটু বললেও ভয়ে থাকতে হয় কখন কোন সার্টিফিকেট
না চাইতেই এসে হাজির হয়।
‘ইসলামি আন্দোলন’ বিষয়টি বেশ কম্প্রিহেন্সিভ। আমরা যদি বাংলা এবং ইংরেজী শব্দ-যুগলের (ইসলামি আন্দোলন/Islamic Movement) পরিভাষাগত যথার্থতা (কারেক্টনেস) নিয়ে (পরিভাষাটি ঠিক নাকি ঠিক নয়?) বিতর্ক না তুলে শুধুমাত্র এর প্রচলিত অর্থ গ্রহণ করি তবুও এটি ব্যাপক অর্থজ্ঞাপক। তাই আজকের আলোচনায় বিষয়টিকে আমরা কিছুটা সংকুচিত করে একটি নির্দিষ্ট অর্থের উপর আমাদের আলোচনা কেন্দ্রীভূত করব।
ইসলামি আন্দোলন কি? এর কাজ কি?
কুরান-হাদীসে এর ভিত্তিইবা কি? এসব আলোচনায় না গিয়ে আমরা ধরে নিই যে,
ইসলামি আন্দোলন হচ্ছে- তাব্লীগী আন্দোলোন হতে পৃথক একটি আন্দোলন
(বাংলাদেশের ক্ষেত্রে) যা কুরান–হাদীস হতে তার আদর্শিক ভিত্তি নির্মাণ করে
এবং বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমার ভেতরের (আপাতত) রাষ্ট্র-সমাজ পরিচালনায় অংশ
নিয়ে সুখী সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ-কাঠামো গড়ে তুলতে চায়। বাংলাদেশে এ
আন্দোলনের এক অন্যতম ধারক-বাহক হচ্ছে জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ, ছাত্রী
সংস্থা ও ছাত্র-শিবির। এ আন্দোলনের প্রধান ২টি ধারা হচ্ছে- (ক) আদর্শিক
ধারা ও (খ) রাজনৈতিক ধারা। আদর্শিক ধারার কাজ হতে পারে ইসলামের আলোকে
মানুষের জীবন ব্যবস্থা পরিচালনার যে অঙ্গীকার তা তাদেরকে বুঝিয়ে তাদের জীবন
পদ্ধতির মান বদলানো অর্থাৎ প্রচুর প্রাক্টিসিং জনশক্তি তৈরী করা । আর
রাজনৈতিক ধারার কাজ হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘বিজয় লাভ’ করা।
‘বিজয় লাভ’ (ফাতহুম মুবীন/ ইজা যা আ
নাসরুল্লাহি আল ফাতহ) পরিভাষাটি মুসলিম সমাজে আরেক “এ্যাম্বিগুইটির” জন্ম
দিয়েছে। কারণ বিজয় লাভ বলতে ইসলামে বা কুরানে কি বুঝানো হয়েছে তা কিছুটা
অস্পষ্ট। বিজয় লাভ ইহকালে না পরকালে? ব্যক্তিক না সামষ্টিক? মুসলমানের না
ইসলামের? কতগুলো দেশ দখলে আনলে বা কত সংখ্যক মানুষ মুসলমান হলে, কত সংখ্যক
দেশে ইসলামি আন্দোলন ক্ষমতায় আসলে কিংবা কতগুলো দেশের সংবিধানে ইসলামি
রাষ্ট্র, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম কিংবা সার্বভৌমত্ত্বের মালিক আল্লাহ -এসব বিষয়
লিখিত থাকলে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত হয় তা কিন্তু নির্দিষ্ট নয়। তবে ইসলামে
বা কুরানে ‘বিজয় লাভ’ বলতে যাই বুঝানো হোকনা কেন এবং বিষয়টি যে অর্থেই
কুরানে বর্ণনা করা হোকনা কেন, আপাতভাবে, আদর্শিক বিজয় (‘দাওয়াতের মাধ্যমে
লোক তৈরী’) কিংবা ‘রাজনৈতিক বিজয়’ বলতে (পরকালে প্রতিদান পাবার পাশাপাশি)
দুনিয়াবী বিজয়কেই বুঝানো হয়। আর দুনিয়াবী এ বিজয়ের দুটি অর্থ হলো- (১)
প্রচুর পরিমাণে আদর্শিক লোক গঠন (আদর্শিক ক্ষেত্রে) এবং (২) রাজনৈতিক
ক্ষেত্রে (বর্তমানে বাংলাদেশে) রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়ে ‘ন্যায়নীতি ও
সুবিচার’ এর ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা ।
আমরা যখন ‘ইসলামি আন্দোলন’ শব্দটি ব্যবহার
করব, তখন মুলত এ দুটি অর্থ সামনে নিয়ে পরিচালিত আন্দোলনকেই বুঝবো। ফলত,
ইসলামি আন্দোলনের বর্তমান পার্থিব উদ্দেশ্য যেহেতু (আপাতভাবে) অন্যান্য
আন্দোলনের মতোই তাই কোন দল, সংগঠন বা সংস্থার বিজয় বা অস্তিত্ব রক্ষার মতোই
এর অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলো। এখানে আমরা ইসলামি আন্দোলনের জন্য অপরিহার্য
উপাদানগত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা না করে বরং ‘আন্দোলন পরিচালনাগত কৌশলের’
একটি দর্শনগত মূলনীতি’র (ফিলোসফিক্যাল প্রিন্সিপ্যল) বিষয়ে করণীয় বিষয়ে মত
প্রকাশ করব। সেটি হলো- “আন্দোলনের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণের ক্ষেত্রে
নতুন পলিসি গ্রহণের পদ্ধতি”
জন্ম ও মৃত্য স্বতঃসিদ্ধ। জীবনের ব্যাপ্তিও
সীমিত এবং স্বতঃসিদ্ধ। স্বতঃসিদ্ধ হচ্ছে পরিবর্তনশীলতা বা গতি। গতিই জীবন
(জীবের ক্ষেত্রে)। গতিহীন জীব- জীব নয়, অসাড়, অচল, অকেজো এবং নিস্প্রয়োজনীয়
এবং মৃত। যে জীবিত মানুষটির জন্য অন্যদের কত হাহাকার। একটুখানি কাছে রাখার
জন্য কত আবেদন, নিবেদন। সে মানুষটি যখন মারা যাচ্ছে, তখন তাকে ফেলে দেওয়া
হচ্ছে। যে মানূষটি কিছুক্ষণ আগেও দুনিয়া জয় করে আসল, জাষ্ট মৃত্যুর পরেই
তাতে বসছে মশা-মাছি। কিন্তু সেই মশা-মাছি তাড়াবার এতটুকু শক্তি সে বিপ্লবী,
বিজয়ী ব্যক্তির থাকেনা। জন্ম থেকে মৃত্য পর্যন্ত ৬০-৭০ বছরের এই ছোট্ট
বয়সেই মানুষের কত পরিবর্তন। এ পরিবর্তন কি শুধু ফি বছর। না, তা নয়। এ
পরিবর্তন ঘটছে প্রতিনিয়ত। প্রতিটি ন্যানো কিংবা পিকো সেকেন্ডে। আর মানব
দেহের পরিবর্তন শুধু ফিজিক্যাল, বায়োলজিক্যাল, ফিজিলজিওক্যাল কিংবা
এনভায়রনমেনটাল-ই নয় বরং তা ইমোশানাল, এজুকেশন্যাল, মেন্টাল, ফিলসফিক্যাল,
জেনেটিক্যাল এবং সাইকোলজিক্যালও। আর মূলত এসব ফ্যাক্টর-ই মানুষের
চিন্তা-চেতনা, রুচিবোধ ও বিশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এসব ফ্যাক্টরগুলো
ক্রমাগত পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের চিন্তা-চেতনা, রুচিবোধ ও বিশ্বাসে
পরিবর্তন আনছে।
ইসলামি আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু
হচ্ছে মানুষ। কারণ নবুয়্যত বা রিসালাত তথা ইসলামের প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে-
ইনশান তথা হিউম্যান বিং। আর তাই ইসলামি আন্দোলন কে কাজ করতে হয় মানুষ ও
মানব সমাজ কে নিয়েই। শিশু, তরুণ, যুবক, পরিণত বয়স্ক, বৃদ্ধ সবাই কে
অন্তর্ভুক্ত করেই ইসলামি আন্দোলনের পরিসীমা। কেউই বৃত্তের বাইরে নয়। ইসলামি
আন্দোলনের কাজ হচ্ছে জীবন ব্যাবস্থা হিসেবে ইসলামের নির্দেশনা মানুষের
নিকট উপস্থাপন এবং সে মোতাবেক তাদেরকে ইসলামি অনুশাসন প্রতিপালন করতে
উদ্বুদ্ধকরণ । এই উপস্থাপন ভঙ্গি যত সুন্দর হবে, যত হৃদয়গ্রাহী হবে, যত
সাবলীল হবে, যত সায়িন্টিফিক হবে; মানুষ তত ভালভাবে ইসলাম ও ইসলামি
নির্দেশনা বুঝতে পারবে; তত বেশি গতিশীল হবে ইসলামি আন্দোলনের ধারা। আর
মানুষ যত বেশি ইসলামি আন্দোলনের দিকে আসবে, ইসলামি আন্দোলনের লক্ষ্যমাত্রা
তত বেশি অর্জিত হবে। তাই মানুষের রুচিবোধ, জ্ঞান, দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে
ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদেরকেও তাদের হেকমত, স্ট্রাটেজী, কলা-কৌশল ও মৌডাস
অপারেন্ডি পাল্টাতে হবে যদিও ইসলামের শ্বাশত বাণী থাকবে অপরিবর্তনীয়।
নিত্য-নতুন কলা কৌশল অবলম্বন, সময়োপযোগী কর্ম-পরিকল্পনা ধারণ-বরণ ও
বাস্তবায়নের দ্বারাই কেবল ইসলামি আদর্শের প্রচার-প্রসার ও বাস্তবায়ন সম্ভব।
হীনমন্যতাবোধ (inferior′ity com`plexity)
ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র কারো জন্যই উপকারি নয়। এটা ব্যক্তির ভেতরের সকল
সত্ত্বা তথা শক্তিকে কুঁরে কুঁরে খেয়ে ফেলে। ব্যক্তি হয়ে পড়ে দূর্বল। হতাশ
ব্যক্তি নিজেই নিজের জন্য হয়ে পড়ে বোঝা। অন্যের দায়িত্ব নেয়া দূরের কথা,
পরিবার কিংবা সমাজের অন্যদেরকেই তখন হতাশ ব্যক্তির দায়িত্ব পালন করতে হয়।
ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের প্রতিনিয়ত দাওয়াতি কাজ করতে হয়, হাজারো সমস্যার
মুখোমুখি হতে হয়, মোকাবিলা করতে হয় নানান ঝামেলা। তাই তাকে হতে হয় শারিরীক,
মানসিক ও জ্ঞানগতভাবে শক্তিশালি। সকল বাধা মোকাবিলা করে তাকে ছুটতে হয়
সামনের পানে। তাই ইসলামি আন্দোলনে হীনমন্যতাবধের কোন সূযোগ নেই। সকল
হীনমন্যতাবোধ দূর করে তাকে এগুতে হয় সামনের দিকে সংশপ্তকের ন্যায়। এ
প্রসঙ্গে আবু নকীব চাচার কথা ‘ইসলামি আন্দোলনে হীনমন্যতাবোধের সূযোগ নেই’
কথাটি ১০০% সত্য। শুধু ইসলামি আন্দোলন কেন, পৃথিবীর কোন আন্দোলনেই
হীনমন্যতাবোধের সূযোগ নেই। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো- হীনমন্যতাবোধ কোনটি?
পৃথিবীর সব কিছুই সময়ের সাথে সাথে গতিশীল।
গতিশীলতার সাথে তাল মিলাতে সব কিছুই যখন পরিবর্তিত হচ্ছে স্বেচ্ছায়,
সাবলীলভাবে। তখন কেন ইসলামি আন্দোলনের গতিধারাকে সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে
হবে ‘বাধ্য হয়ে’ । কেন চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত শত-সহস্র
কলা-কৌশল আত্মীকরণ না করে শত্রুর বাধা ও কলা-কৌশলের কাছে পরাজিত হয়ে ‘যে
পথে ধাবিত হতে বাধ্য হচ্ছে’ তাকে গ্রহণ করবে। এখন
প্রশ্ন-‘জ্ঞান-গবেষণাদ্ভাবিত পথ’কে গ্রহণ না করা হীনমন্যতাবোধ নাকি তাকে
মেনে নিয়ে ‘আত্মীকরণ করাই’ হীনমন্যতাবোধ। সার্বজনীন মত হচ্ছে- মানুষ যখন
জ্ঞান-গবেষণার মাধ্যমে নতুন পথ-মত-উপায় উদ্ভাবন করে তখন তাকে ইনফেরিওয়র বলে
না বরং বলে সুপিরিয়র, প্রগতিশীল এবং হীনঅমন্যতামুক্ত উদার ও সুবিবেচক। আর
এসব গুণাবলী সম্পন্ন লোককেই অন্যরা অনুসরন করার চেষ্টা করে। সে অজান্তেই
হয়ে পড়ে সকলের আইডল এবং অন্যরা হয়ে পড়ে তাদের অজান্তেই তার অনুসারি বা
ফলোয়ার। আর তাই ……।
তাই বলি কী- চাচা, আপনার কথিত বাক্যটি সঠিক
হলেও তার ‘লক্ষ্যবস্তু’ কিন্তু একটু প্রশ্নবিদ্ধ। তাই চাচা, আসুন, প্রকৃত
হীনতাকে কে চিহ্নিত করি, উদারতাকে স্বীকার করি, তুলে ধরি। আমরা মানুষ। ভুল
হতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক। ভুল হতে পারে যেমন আমার, যেমন অন্যের, তেমনি
আপনারও। ভুল করা স্বাভাবিক হলেও ভুলকে ভুল বলে স্বীকার করা কিন্তু খুব
স্বাভাবিক বিষয় নয়। এটি বরং কিছুটা অস্বাভাবিকই। ভুলকে ভুল বলে স্বীকার করা
তাদের জন্যই সম্ভব যাদের রয়েছে এক বিশাল চিত্ত। আমাদের বিশ্বাস, আপনি এর
চাইতেও বিশাল চিত্তাধিকারি। আপনার জীবন, যৌবন, আপনার ত্যাগ, সংগঠন করতে
গিয়ে প্রদর্শিত ধৈর্যই তার প্রমাণ।
আমরা ইসলামি আন্দোলন করি, নিজে আদর্শিক
মানুষ হবার জন্য, অন্যকে এ পথে ডাকার জন্য। আমরা চাই আমাদের কর্মপন্থা এমন
হোক যাতে বেশি সংখ্যক মানুষ আমাদের সাথে এসে, আমদের পথে চলে, কুরানকে
ভালবেসে শান্তির সন্ধান পায়। তাই এখানে গৃহীত হোক ইসলামি মূলনীতি সম্বলিত
নব নব কর্মপন্থা, নব নব পথ-পদ্ধতি ও কলা কৌশল। আর এর জন্য প্রয়োজন সৃজনশীল
হওয়া, উদ্ভাবনশীল হওয়া, নির্মাণকূশলী হওয়া। অন্যকে অনুসরণ করে নয় বরং
অন্যের দ্বারা অনুসৃত হয়েই সম্ভব জাতিকে পরিবর্তন করা, তাদের কে লিড দেয়া,
নেতৃত্ব দেয়া।
‘ইসলাম’ ও ‘ইসলামি আন্দোলন’ এক নয়। দু’টি
ভিন্ন পরিভাষা, দু’টি ভিন্ন বিষয়। ইসলাম সুনির্দিষ্ট, সুলিখিত (আল-কুরান) ও
হাদীসের দ্বারা সুব্যাখ্যাত। এটি প্রিন্সিপল, মূলনীতি। কিন্তু ‘ইসলামি
আন্দোলন’ কোন মূলনীতি নয়। বরং এটি মূলনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যম। ইসলামি
আন্দোলন হচ্ছে ইসলাম কে মানুষের নিকট তুলে ধরার, উপস্থাপন করার, ইসলাম কে
মুলনীতি হতে বাস্তব জীবনে ফুটিয়ে তোলার একটি আর্ট বা শিল্প। এটি ইসলাম কে
মানুষের নিকট নিয়ে যাবার একটি ধারা, মাধ্যম বা উপায়। আর তাই ইসলাম কে
অপরিবর্তিত রেখে ইসলামি আন্দোলনের কলা-কৌশল পরিবর্তন করলে ইসলামের
মৌলিকত্ত্বের কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়না। আর তাই বাধ্য হয়ে নয় বরং
স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নতুন পথ-পন্থা উদ্ভাবন করাই হচ্ছে স্বমহিমায় টিকে থাকার
এক ও একমাত্র মাধ্যম। আর এখানেই সৃজনশীলতার অদ্বিতীয়তা, ইউনিকনেস ।
তাই চাচা আসুন, বলি, আপনার কথিত (ও সঠিক)
বাক্যের বাকী অংশটুকুও…। গেয়ে উঠি সমস্বরে। কাজের সময় কিন্তু বেশি নেই।
জীবনের বাতি কিন্তু নিভু নিভু প্রায়। জীবন শেষতো- সব শেষ। তাই অনুরোধ- গেয়ে
যান আমাদের সাথে- ইসলামের স্বার্থে-সংগঠনের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে ।
(এর পরেও) ভুল যদি বা হয়েই যায়- হলোই না হয় । ক্ষমা করবেন আল্লাহ-আমাদের
আন্তরিকতা, দরদ আর নিয়তের কারণে। আমরা আশায় রইলাম। আপনি এক দিন ইসলামি
আন্দোলনের এই অপরিহার্যতার কথা বুঝবেন, আমদের কাছে আসবেন, ডাক দিবেন,
আমদের সাথে কোরাস কন্ঠে গেয়ে উঠবেন-
“ইসলামি আন্দোলনে সৃজনশীলতার বিকল্প নেই”
(No Alternative of Creativity in Islamic Movement )
আপনি আরো বলবেন, “তোমার এগিয়ে যাও আমাদের
ফেলে। মায়া করোনা। ভয় পেয়োনা। আমরা বৃদ্ধ, দূর্বল, অসহায়। আমরা যেতে
পারবোনা তোমাদের সাথে, হে তরুন। আমরা আমাদের সব আন্তরিক্তকতা, দরদ আর
ভালবাসা দিয়ে আছি তোমাদের সাথে। পেছনে ফিরে তাকাবেনা কিন্তু। সময় অল্প। কত
নির্যাতিত, নিপীড়িত মা-ভাই-বোন অপেক্ষমান তোমাদের জন্য। যেমন অপেক্ষমান ছিল
আমাদের বাংলার এই পূর্ব-পুরুষরা একদিন মুসলিম শাসকদের জন্য। আমাদের সাথে
তোমাদের দেখা হবে জান্নাতের সিঁড়িতে- ইনশাআল্লাহ।”
ঠিক আছে, চাচা… আমরাও থাকলাম। আপনি না এসে
পারবেন না আমাদের সাথে। কারণ আমরা যে আপনারই সৃষ্ট। আমাদের চিন্তা-চেতনায়
ঈমানের যে শানিত ধারা, সে বীজ তো আপনারই বপন করা। ইসলামি চিন্তা আমাদের
মনে-বিশ্বাসে অংকুরোদগমের পর প্রয়োজনীয় যে নার্সিং সেবা তা তো আপনারই করা।
সময়ে সময়ে আমাদের চেতনায় যে ধার দেয়া হয়েছে সে ধার তো আপনারই দেয়া। নদী
যেমন অসংখ্য গ্রাম-গ্রামান্তর, দেশ-দেশান্তর ঘূরে এসে সব শেষে সাগরেই ফিরে।
চাচা, তেমনি আমরাও… আমাদের স্বাক্ষাৎ হতেই হবে… হবেই হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ
মূল শিকড় তো এক-‘আল কুরআন’।
সমাপ্ত
(Source: First pulished in http://imbd.blog.com/?p=973)