জ্ঞান-বিজ্ঞান
সদা পরিবর্তনশীল। জ্ঞান-বিজ্ঞান সমাজ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে এবং
প্রচলিত সমাজ-ব্যবস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই উভয়ের মাঝে প্রয়োজন
একটি মিথস্ক্রিয়ার। এই মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজ ও মানব জীবন ব্যবস্থা
গতিশীল থাকে ।
মুখমন্ডল বলতে বাল্যকালে শিশুদের যা শিখানো হয়- অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাইক্রো লেভেলে গেলে সেই মুখমন্ডলের বা মুখের অস্তিত্ব থাকে না ।
প্রাইমারী স্কুলে যে সকল বিষয়ে পাঠাদান করা হয়, কলেজ কিংবা ভাসির্টি লেভেলে তার আর অস্তিত্ব থাকে না । উচ্চ শিক্ষা তথা ডক্টরেট কিংবা পোষ্টডক লেভেলে সাবজেক্ট গৌন হয়ে যায়- মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান বা দর্শন। এভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যতই সুক্ষ্ম বা উচ্চ স্তরে পৌছানো যায় ততই নতুন নতুন পরিভাষা বা টার্মি নোলজীর উদ্ভব হয়, কনসেপ্টের স্টান্ডার্ড (মানদন্ড) এর পার্থক্য ঘটে ।
বিষয়টি সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য ।
যেহেতু ইসলামপন্হী আন্দোলন বর্তমানে তার ৭/৮ দশক
অতিক্রম করেছে । তাই প্রাথমিক পর্যায়ের আন্দোলনকে তার পরবর্তী স্টেজে
উন্নীত করতে হলে প্রয়োজন হবে আন্দোলনের পার্থিব অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারন, অর্জনের কলা-কৌশল ও তার জন্য প্রয়োজনীয় মানব সম্পদের ক্রাইটেরিয়া
পুন:নির্ধানর। আর এসব কাজের জন্যই আবশ্যকীয় হচ্ছে কিছু পরিভাষা বা
টার্মিনোলজীর পুন:সংজ্ঞায়ন।প্রাইমারী স্কুলে যে সকল বিষয়ে পাঠাদান করা হয়, কলেজ কিংবা ভাসির্টি লেভেলে তার আর অস্তিত্ব থাকে না । উচ্চ শিক্ষা তথা ডক্টরেট কিংবা পোষ্টডক লেভেলে সাবজেক্ট গৌন হয়ে যায়- মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান বা দর্শন। এভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যতই সুক্ষ্ম বা উচ্চ স্তরে পৌছানো যায় ততই নতুন নতুন পরিভাষা বা টার্মি নোলজীর উদ্ভব হয়, কনসেপ্টের স্টান্ডার্ড (মানদন্ড) এর পার্থক্য ঘটে ।
বিষয়টি সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য ।
(১) মুসলিম রাষ্ট্র নয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র:
মুসলিম রাষ্ট্র (Muslim State) শব্দটি তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিকভাবে ভুল। মুসলিম রাষ্ট্র শব্দটি ইসলাম পন্থী আন্দোলনের জন্য সমস্যা সৃষ্টিকারী। তাই ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ শব্দটির পরিবর্তে ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র’ (Muslim Majority state) পরিভাষাটির প্রচলন ঘটাতে হবে।
(২) ইসলামী রাষ্ট্র: ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ ( Islamic State ) শব্দটি তাত্ত্বিক, অর্থগত এবং ব্যবহারিক দিক দিয়ে দ্ব্যার্থবোধক। ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ (Islamic State) শব্দটি কোন অর্থ বহন করেনা। বরং এটি এক ধরনের মিসনোমার ( misnomer যা ভুল অর্থ বহন করে)। তাই অন্য কোন নতুন শব্দ উদ্ভাবিত না হওয়া পর্যন্ত এটি পরিহার করা দরকার।
(৩) ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ইসলাম: শব্দটি শব্দ বা ভাষার একটি অপ-প্রয়োগ। তত্ত্ব, অর্থ বা ব্যবহারিক দিক থেকে এটি অর্থহীন । স্বৈরাচারী, অত্যাচারী, রাষ্ট্রনায়কদের রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে পরিভাষাটির প্রচলন হয়েছে। ধর্মীয় ভিত্তিতে রাষ্ট্র যেমন মুসলিম বা ইসলামী হতে পারেনা, তেমনি রাষেট্রর কোন ধর্ম থাকতে পারেনা। ইসলামপন্থী সমাজ-চিন্তকদের এগুলো রিডিফাইন করতে হবে।
(৪) ইসলামী আন্দোলন নয় ইসলামপন্থী আন্দোলন : ‘রাসুলের সংগ্রামী জীবন ও কর্মধারাকে ‘ইসলামী আন্দোলন’ (Islamic Movement) দ্বারা চিহ্নিত করে বাকী সকলের ‘ইসলাম’ তথা রাসূলের অনুসরন প্রয়াসকে ‘ইসলাম পন্থী আন্দোলন’ ( Pro-Islamic Movement) দ্বারা প্রতিস্থাপন করা দরকার । এর ফলে
জামায়াত- শিবির করলে বা না করলে যে superiority complex inferior complexity ‘র জন্ম লাভ ঘটে সেটির বন্ধ হবে।
(৫) ‘ ইসলামী আন্দোলন’ ও ইসলামপন্থী আন্দোলন : এ উভয়ই শব্দ হতে আন্দোলন (Movement) শব্দটি প্রতিস্থাপন করা দরকার। ঐতিহাসিক প্রক্ষাপট বিবেচনায় আনলে দেখা যায়, Movement (আন্দোলন) শব্দটি পশ্চিমাদের উদ্ভুত এবং ইসলামের মানবতাবাদী, সর্বজনীন কার্যাবলীর সাথে মুভমেন্ট বা আন্দোলন শব্দটির অর্থগত প্রাসঙ্গিকতা অনেক ক্ষেত্রেই শূন্য বা শূন্যের কাছাকাছি।
(৬) ইসলামি বিপ্লব (Islamic Revolution): ইংরেজী প্রতিশব্দটি ইংরেজদের আরোপিত। বাংলা অর্থটি বাংলা ভাষার নন-ইসলামিকদের অনুবাদকৃত। আর ইসলামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা অনেকটা অবচেতনভাবেই ইসলামের সামগ্রিক দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করতে শব্দটির ব্যবহার শুরু করেন। ফ্রান্স বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব, শ্রমিক বিপ্লব, চাইনিজ কিংবা রাশিয়ান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাথে ইসলামের সঠিক কার্যাবলী ও দর্শনের সম্পর্ক সাংঘর্ষিক। তাই সচেতন ভাবে এসব পরিভাষা এড়িয়ে চলতে হবে।