Wednesday, September 18, 2013

ইসলামী আন্দোলনের বহুমাত্রিক বিকাশের জন্য ‘বড়ত্বের প্রচলিত ধারণা’র পরিবর্তন আবশ্যক



ইসলামি আন্দোলনের ব্যাপ্তি, এম.এন হাসান ভাইয়ের ভাষা্‌য়, সাগরের মতই বিশাল। এর শুধু শুরু আছে, শেষ নেই। আরম্ভ আছে, সমাপ্তি নেই। কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষে একক ভাবে ইসলামি আন্দোলনের সকল কাজ করা সম্ভব নয়। তাই এখানে প্রয়োজন নানা মাত্রিক কাজের, নানা মাত্রিক যোগ্যতা সম্পন্ন লোকের । যে যেখানে কাজ করবে, তাকে সেখানে প্রফেশানালিজম অর্জন করতে হবে। আপন আপন পরিসরে সবাইকে জীবন উৎস্বর্গ করতে হবে।কেউ কেউ কিছু বলল কিনা, কেউ চিনল কিনা, কেউ প্রশংসা করল কিনা, কেউ বড় হিসেবে সম্মান করল কিনা, কেউ ইতিহাসের পাতায় রক্ষিত (!)  হল কিনা- এসব ভাবার সূযোগ এখানে নেই। যে যতটুকু কাজ করবে, যে যতটুকু পরিশ্রম করবে, যে যতটুকু নিজেকে বিলীন করে দেবে, মুসলিম বিশ্বাস মতে, সে ঠিক ততটুকুই পরকালে পাবে। আর কাজের ন্যাচারের কারণে কেউ বাইরে এক্সপোজড হবে, কেউ আন-এক্সপোজড থাকবে, কেউ পরিচিতি পাবে, কেউ পাবেনা, কারো হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে, কারো হাতে থাকবেনা, কারো হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকবে, কারো হাতে থাকবেনা। এই জব ন্যাচার দিয়ে মানুষ কে বিচার করা চলবেনা । ইসলামি আন্দোলনের ভিতরে যে সকল জিনিষ সংগঠনের মূল সত্ত্বাকে ধ্বংস করে ফেলে, আমার বিবেচনায়, তার অন্যতম একটি হচ্ছে ‘বড়ত্বের’ ধারণা। ‘বড়ত্বের’ সঠিক ধারণা ইসলামি আন্দোলনের অগ্রযাত্রায় যেমন অসাধারণ ভূমিকা পালন করতে তেমনি এর ভুল ধারণা সংগঠনের অগ্রগতিকে পারে চরমভাবে ব্যাহত করতে, পারে সংগঠনের গতিপথকে ভুল পথে চালিত করতে। এই বিষয়টি সামনে রেখেই উপরোক্ত শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে লেখার চেষ্টা করবো । আজকের ১ম পর্বে বহুল প্রচলিত ২টি গল্প বলে এই গল্পের সারাংশটুকু আমরা বুঝার চেষ্টা করবো।



১ম গল্পঃ ইঁদুরের মেয়ের বিয়ে

হিমালয়ের পাদদেশে বাস করত এক দল ইঁদুর। সে ইঁদুর দলের সর্দার দেবতার নিকট হতে তার এক ভাল কাজের পুরস্কার হিসেবে এক দিন বর হিসেবে পায় একটি সুন্দরী মেয়ে। ইঁদুর তার মেয়েটিকে খুব ভালবাসত। সে  তার বউয়ের পরামর্শে সিদ্ধান্ত নিলো, তার মেয়েটিকে সে বিয়ে দেবে সব চেয়ে শক্তিশালী কারো সাথে । তাই প্রথম ইঁদুরটি তার মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য গেল আকাশের নিকট এবং আকাশ কে বলল-ভাই তুমি অনেক বড়, তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চাই । আকাশ তাকে এই বলে ফেরত দিল যে, মেঘ আমার চাইতে শক্তিশালী  এবং সে আমাকে ঢেকে ফেলে । ইঁদুর মেঘের নিকট গিয়ে বলল, আমি তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চাই। মেঘ বলল, বাতাস আমার চাইতে শক্তিশালী, সে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে বেড়াই । এরপর মেঘ বাতাসের কাছে গিয়ে একই কথা বলল। উত্তরে বাতাস বলল, পাহাড় আমার চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী, সে আমাকে আঁটকিয়ে ফেলে । অবশেষে ইদুঁর পাহাড়ের নিকট গিয়ে সব খুলে বলল। পাহাড় বলল, ভাই, সবকিছু ঠিক আছে। আমি বাতাস কে বাধা দেয় এটাও ঠিক। কিন্তু আমার চাইতেও বড় এক জাতি আছে। সে আমার দেহেই বাস করে কিন্তু আমাকে কেটে টুকরা টুকরা করে দেয় এবং আমার ধ্বংস সাধন করে। আর সে হচ্ছে ইদুঁর জাতি। কাজেই আপনি যদি সবচেয়ে শক্তিশালী  কারো সাথে আপনার মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চান, তবে ইঁদুরের সাথেই আপনার মেয়ের বিয়ে দেন। এ কথা শুনে ইঁদুর আনন্দে লাফ দিতে দিতে বাড়ি ফেরত আসল।


শিক্ষনীয়ঃ কেউ পৃথিবীতে একক ভাবে বড় নয়। একক জন একেক কাজের জন্য নিবেদিত এবং সংশ্লিষ্ট কাজে সে দক্ষ। যার যেখানে কাজ, সে সেখানে বড়। কাজেই প্রত্যেক কে তার স্ব স্ব কাজ দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। এক জনের এক ধরণের কাজের সাথে অন্য জনের অন্য ধরনের কাজকে তুলনা করা ঠিক নয়।


২য় গল্পঃ কে বেশি শক্তিশালীঃ সূর্য না বাতাস? 


এক দিন সূর্য আর বাতাস তর্ক করছে। তাদের মধ্যে কে বেশি শক্তিশালী । সূর্য বলল, আমি; আর বাতাস বলল, না আমি। অবশেষে সিদ্ধান্ত হল- পরীক্ষার লড়াইয়ে অংশ নেয়ার । দেখা গেল- সে সময় এক জন লোক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল । গায়ে তার একটি চাদর জড়ানো । সূর্য বলল, দেখি তুমি ঐ ব্যক্তির গা হতে চাদর খানা সরিয়ে ফেল। বাতাস বলল, ঠিক আছে। বাতাস যতই জোরে প্রবাহিত হওয়া শুরু হল, সেই ব্যক্তি ততই জোরে চাদর খানা গায়ের সাথে চেপে ধরল। অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে বাতাস বলল, ঠিক আছে, আমি ব্যর্থ হলাম, তুমি এবার চেষ্টা কর । এবার সূর্য তার পালা শুরু করল । সূর্য যেই মাত্র তাপ দেয়া শুরু করলো, লোকটি তার গা হতে চাদরখানা সরিয়ে হাতে নিল । বাতাসের পরাজয় হল, সূর্য জিতে গেল ।


এই পরাজয়ে, বাতাসের মন খারাপ হয়ে গেল এবং সে আরেকটি লড়াইয়ে অংশ নিতে চাইল। সূর্য রাজি হল। এবার তারা শুরু করল একটি পাথরকে সরানোর যুদ্ধ । এবার প্রথমে সূর্য তার পালা শুরু করল। সূর্য যতই তাপ দিতে থাকল, পাথর ততই গরম হল। কিন্তু তার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হলনা । অবশেষে তাপ দিতে দিতে পাথর গলা শুরু করল তবুও পাথরের নড়ার কোন নাম-গন্ধ নেই। শেষমেষ গলতে গলতে এক সময় পাথর বাষ্পীভূত হয়ে হারিয়ে গেল। এতে সূর্য লজ্জা পেয়ে গেল এবং বাতাস কে তার পালা শুরু করতে বলল। বাতাস সাথে সাথে জোরে প্রবাহিত হওয়া শুরু করল এবং পাথরটিকে তার অবস্থান থেকে দূরে নিক্ষেপ করল। এখানেই সূর্য ও পাথরের লড়াই শেষ হল। উভয়েই লজ্জিত হল ।


শিক্ষনীয়ঃ কেউই চরমভাবে শক্তিশালী  নয় ।