১.১:ভূমিকা:
বর্তমান বিশ্ব প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি এই পরিবর্তনশীলতাকে এনে দিয়েছে এক নতুন গতি। এই পরিবর্তন যেমনি ঘটছে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির নিত্যনতুন আবিস্কারে তেমনি ঘটছে মানুষের জীবনযাত্রায় এবং মানবজীবন সম্পর্কিত সকল সমাজ, দল ও সংঘে। সম্প্রতি এমন অনেক পরিবর্তন হয়ে গেল আমাদের রাজনীতিতে। এসব পরিবর্তনের অন্যতম একটি হচ্ছে, এদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত সক্রিয় এবং সবচেয়ে বড় দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের/ সংবিধানের ১৮তম সংশোধনী ( যা তারা জমা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে)।
বর্তমান বিশ্ব প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি এই পরিবর্তনশীলতাকে এনে দিয়েছে এক নতুন গতি। এই পরিবর্তন যেমনি ঘটছে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির নিত্যনতুন আবিস্কারে তেমনি ঘটছে মানুষের জীবনযাত্রায় এবং মানবজীবন সম্পর্কিত সকল সমাজ, দল ও সংঘে। সম্প্রতি এমন অনেক পরিবর্তন হয়ে গেল আমাদের রাজনীতিতে। এসব পরিবর্তনের অন্যতম একটি হচ্ছে, এদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত সক্রিয় এবং সবচেয়ে বড় দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের/ সংবিধানের ১৮তম সংশোধনী ( যা তারা জমা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে)।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যেহেতু প্রথম থেকেই শাসনব্যবস্থার কথা বলে আসছে, কাজেই এবারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ১৮তম সংশোধনী, বিশেষ করে গঠনতন্ত্র হতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ত্ব শব্দটি বাদ দেয়ার বিষয়টি, সমালোচকদের সূযোগ করে দিয়েছে নতুন এক বিতর্কের, নতুন সমালোচনার। এই সমালোচনা যেমনি আসছে ইসলামবিরোধীদের নিকট থেকে তেমনি আসছে জামায়াতের রাজনৈতিক/ সামাজিক/ সাংস্কৃতিক বিরোধীদের নিকট থেকে এমনকি ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত অন্যান্য দল/ গ্রুপ বা ব্যক্তির পক্ষ থেকেও। আর তর্ক-বিতর্ক ও সমালোচনার এই ঢেউ রাজনৈতিক ময়দান থেকে উঠে এসেছে প্রিন্টিং এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ছাড়িয়ে ব্লগ এবং ওয়েবের পাতায়। নতুন এই বিতর্ক ও সমালোচনার রয়েছে নানান পক্ষ ও নানান দল। সবাই প্রকাশ করছে তাদের মতামত। জামায়াতে ইসলামীর সংবিধানের এই সংশোধনী কে কেউ দেখছে জামায়াতের আদর্শচ্যুতি হিসেবে, কেউবা আপোষকামিতা হিসেবে, আবার কেউ ধর্মব্যবসা কিংবা দলীয় রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে। আবার কেউ এই সংশোধনী কে দেখছে ইসলামি আদর্শের অপব্যাখ্যা হিসেবে। এর বিপরীতে জামাতপন্থী লোকজন একে দেখছে তাদের কৌশল হিসেবে, বর্তমান সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশনের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা হিসেবে এবং তাদের কেউ কেউ বলছে সময় ও সূযোগ পেলে জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে তারা পরবর্তীতে শুধু তাদের দলীয় সংবিধানেই নয় বরং জাতীয় সংবিধানেও এসব ধারা সংযোজন করবে ।
১.২:
এই প্রেক্ষাপটেই আমরা অনুসন্ধান করতে করতে চাই জামাতের সংবিধান সংশোধনের
প্রধান কারন কি? সংবিধানের এই সংশোধনীর ফলে তাদের কোন আদর্শচ্যুতি ঘটবে
কিনা ? মুসলমানদের কোন সংবিধানে এর যৌক্তিতকাই বা কতটুকু ? সংবিধানে এসব
ধারা বা শব্দাবলী না থাকলে ঈমানের কোন সমস্যা হবে কিনা ? সংবিধানে এসব ধারা
বা শব্দাবলী না রেখে অন্য কোন উপায়ে আল্লাহর সার্বভৌমত্ত্ব মেনে চলা যায়
কিনা ? বিরোধীরাই বা কেন এসব সমালোচনা করে? এসব সমালোচনা কিভাবে এড়িয়ে
সামনে চলা যায় ? ইত্যাদি বিষয়গুলো ।
১.৩.
যেহেতু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংবিধানের সংশোধনীর সাথে সাথে ইসলামী দর্শনের রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি এবং আর্ন্তজাতিক নীতিমালা জড়িত, তাই জামায়াতে ইসলামীর সংবিধানের সংশোধনীর ব্যাপারে কোন কমেন্ট করার পূর্বে ইসলামের রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি এবং আর্ন্তজাতিক নীতিমালা জানার চেষ্টা করবো। আমরা আমাদের এই আলোচনাকে কয়েকটি শিরোনামে আলাদা আলাদা ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্বে নিম্নোক্ত শিরোনামগুলো আত্মস্থ করার চেষ্টা করবো।
যেহেতু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংবিধানের সংশোধনীর সাথে সাথে ইসলামী দর্শনের রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি এবং আর্ন্তজাতিক নীতিমালা জড়িত, তাই জামায়াতে ইসলামীর সংবিধানের সংশোধনীর ব্যাপারে কোন কমেন্ট করার পূর্বে ইসলামের রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি এবং আর্ন্তজাতিক নীতিমালা জানার চেষ্টা করবো। আমরা আমাদের এই আলোচনাকে কয়েকটি শিরোনামে আলাদা আলাদা ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্বে নিম্নোক্ত শিরোনামগুলো আত্মস্থ করার চেষ্টা করবো।
ক. মুসলমানদের দায়বদ্ধতা কার নিকট ? শরীয়াহর নিকট নাকি কোন রাজনৈতিক/
সামাজিক/ সাংস্কৃতিক আন্দোলন / দল বা এর সংবিধান / গঠনতন্ত্রের নিকট ?
খ.ইসলামে রাজনীতি বনাম রাজনীতিতে ইসলাম: একটি পর্যালোচনা
গ. ইসলামি আন্দোলন (ইসলামিক মুভমেন্ট), ইসলাম-পন্থী আন্দোলন
(প্রো-ইসলামিক মুভমেন্ট) বনাম ইসলাম-পন্থী রাজনৈতিক দল (পার্টি): একটি
পর্যালোচনা
ঘ.রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ বনাম ইসলামি আন্তর্জাতিকতাবাদ, জাতীয় নাগরিক অধিকার বনাম ইসলামি বিশ্ব মানবাধিকার: একটি পর্যালোচনা
২.১ ইসলাম, মুসলিম এবং মুসলমানদের সংবিধান:
‘ইসলাম’ ও ‘মুসলিম’ শব্দদুইটি উৎপত্তিগতভাবে আরবী ভাষার শব্দ হলেও আভিধানিক অর্থের বাইরেও শব্দদুইটির রয়েছে পারিভাষিক বিশেষ অর্থ। আর এই পারিভাষিক বিশেষ অর্থ শব্দদুইটিকে দিয়েছে এক বিশ্বজনীন ও সার্বজনীন রুপ। কারন শব্দদুইটি মহাগ্রন্থ আল কুরআনের এক বিশেষ টার্মিনোলজি। মুসলিম হচ্ছেন তিনি যিনি ইসলাম গ্রহন করেন। আর ইসলাম গ্রহন মানে হচ্ছে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন। এই আত্মসমর্পন হচ্ছে অ্যাবসলিউট এবং আন কন্ডিশানাল । দেশ, কাল, পরিবেশ, ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও নৃতাত্ত্বিক যে কোন পরিচয়ের উর্দ্ধে ওঠে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্ত্বের নিকট নিজেকে সমর্পন করার মাধ্যমেই কোন মানুষ ইসলামে প্রবেশ করতে পারে অর্থাৎ মুসলমান হতে পারে। আর এ কারনেই ধর্ম হিসেবে ইসলাম ইউনিক ও অনন্য। বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত অন্যান্য ধর্ম হতে ইসলামের বিশেষ পার্থক্য হচ্ছে এই যে, ইসলাম একজন মুসলিমের গোটা জীবনের সকল ক্ষেত্রের জন্য অবশ্যিকভাবে পালনীয় বিধি-বিধানের মৌলনীতি তার সামনে উপস্থাপন করেছে।
‘ইসলাম’ ও ‘মুসলিম’ শব্দদুইটি উৎপত্তিগতভাবে আরবী ভাষার শব্দ হলেও আভিধানিক অর্থের বাইরেও শব্দদুইটির রয়েছে পারিভাষিক বিশেষ অর্থ। আর এই পারিভাষিক বিশেষ অর্থ শব্দদুইটিকে দিয়েছে এক বিশ্বজনীন ও সার্বজনীন রুপ। কারন শব্দদুইটি মহাগ্রন্থ আল কুরআনের এক বিশেষ টার্মিনোলজি। মুসলিম হচ্ছেন তিনি যিনি ইসলাম গ্রহন করেন। আর ইসলাম গ্রহন মানে হচ্ছে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন। এই আত্মসমর্পন হচ্ছে অ্যাবসলিউট এবং আন কন্ডিশানাল । দেশ, কাল, পরিবেশ, ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও নৃতাত্ত্বিক যে কোন পরিচয়ের উর্দ্ধে ওঠে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্ত্বের নিকট নিজেকে সমর্পন করার মাধ্যমেই কোন মানুষ ইসলামে প্রবেশ করতে পারে অর্থাৎ মুসলমান হতে পারে। আর এ কারনেই ধর্ম হিসেবে ইসলাম ইউনিক ও অনন্য। বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত অন্যান্য ধর্ম হতে ইসলামের বিশেষ পার্থক্য হচ্ছে এই যে, ইসলাম একজন মুসলিমের গোটা জীবনের সকল ক্ষেত্রের জন্য অবশ্যিকভাবে পালনীয় বিধি-বিধানের মৌলনীতি তার সামনে উপস্থাপন করেছে।
এই মৌলনীতি হচ্ছে আল-কুরআন ও সুন্নাহ। কুরআন হচ্ছে সরাসরি মহান আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং সুন্নাহ হচ্ছে রাসূলের জীবনে কুরআনের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরন। একজন মানুষ কেবল তখনি মুসলিম হতে পারে যখন সে কুরআন এবং সুন্নাহর পরিপূর্ন অনুসরনের স্বীকৃতি দেয় এবং প্রাত্যহিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে তার অনুসরন শুরু করে।
ইসলামের আর একটি বিশেষত্ত্ব হচ্ছে এই যে, মৃত্যুপরবর্তী জীবনকেও ইসলাম
তার পরিসীমার মধ্যে নিয়ে এসেছে এবং মৃত্যুপরবর্তী জীবনের সফলতাকে সে
মৃত্যুপূর্ববর্তী জীবনের কর্মের সাথে সম্পর্কিত করে রেখেছে। কাজেই মানুষ
চাইলেই স্বেচ্ছাচারী হতে পারেনা, পারেনা স্বীয় পশুত্ববৃত্তির দাস হতে।
বাধ্যতামূলকভাবে তাকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহর বিধান মেনে
চলতে হয়। আর এর ফলেই বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মুসলমানদের দেশ,
কাল, পরিবেশ, ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের ভিন্নতা সত্ত্বেও
এক অপূর্ব মিল পরিণক্ষিত হয়। সব মুসলমানদের মাঝেই চিন্তা-চেতনা ও
জীবনবোধের এক অনন্য সামঞ্জস্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। কারন কোন মুসলমান
পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকনা কেন, প্রত্যেকেই তার গাইডলাইন হিসেবে আলকুরআন ও
সুন্নাহ কে মেনে চলার চেষ্টা করে। আর তাই বলা হয়, আলকুরআন ও সুন্নাহ এক
অনন্য এবং একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী সংবিধান (কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্র। এই
সংবিধান (কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্রের কোন সংস্করন কিংবা সংশোধন নেই। এই
সংবিধান (কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্র বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সকল
মুসলমানদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে মূর্ত কিংবা বিমূর্তভাবে পালিত হচ্ছে।
২.২ ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ইসলাম-পন্থী আন্দোলন:
ইসলাম হচ্ছে, মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহান অল্লাহর নাযিলকৃত এক বিধান। ইহা মানবজাতির জন্য বর্তমানে একমাত্র অনুস্মরনীয় এবং এক, একক ও একমাত্র কল্যানকর বিধান। আল-কুরআন হচ্ছে এই বিধানের তাত্ত্বিক অংশ এবং সুন্নাহ হচ্ছে এর বাস্তবায়ন। সুন্নাহ যেহেতু রাসূলের (স) এর জীবনের সাথে জড়িত, তাই ইসলামকে সঙ্গায়িত করা যায় এভাবে যে, ইসলাম হচ্ছে কুরআনের বিধি-বিধান যার অনুস্মরনীয় বাস্তবায়ন রাসূল (স) মৃত্যুর মূহুর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
ইসলাম হচ্ছে, মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহান অল্লাহর নাযিলকৃত এক বিধান। ইহা মানবজাতির জন্য বর্তমানে একমাত্র অনুস্মরনীয় এবং এক, একক ও একমাত্র কল্যানকর বিধান। আল-কুরআন হচ্ছে এই বিধানের তাত্ত্বিক অংশ এবং সুন্নাহ হচ্ছে এর বাস্তবায়ন। সুন্নাহ যেহেতু রাসূলের (স) এর জীবনের সাথে জড়িত, তাই ইসলামকে সঙ্গায়িত করা যায় এভাবে যে, ইসলাম হচ্ছে কুরআনের বিধি-বিধান যার অনুস্মরনীয় বাস্তবায়ন রাসূল (স) মৃত্যুর মূহুর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আল্লাহর দেওয়া বিধান তথা আলকুরআন বাস্তবায়নের জন্য সর্বশেষ রাসূল (স) কে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। গোটা জীবন এক কঠিন সংগ্রাম ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পার করতে হয়। নবুয়্যত লাভের পর হতে মক্কী জীবনের দীর্ঘ তের বছর কুরায়েশদের নানা প্রতিকুলতা মোকাবিলা করে তিনি শুধুমাত্র আল্লাহর সার্বভৌমত্ত্ব প্রচারেরে কাজে নিজেকে চরমভাবে নিয়োজিত রাখেন। মাদানি জীবনের ১০ বছর তাকে মোট ২৩টি যুদ্ধে বাধ্যতামূলকভাবে অংশগ্রহন করতে হয়। রাসূলের এই তেইশ বছরে ইসলাম প্রচারের কাজে শত শত সাহাবী শাহাদাত বরন করেন, অসংখ্য সাহাবী গুরুতর আহত হন। রাসূল (স) এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং তার জীবদ্দশায় তার পরিকল্পনায় আল্লাহর সার্বভৌমত্ত্ব প্রতিষ্ঠার এই যে আন্দোলন তাই হচ্ছে ইসলামি আন্দোলন (ইসলামিক মুভমেন্ট)। রাসূলের জীবদ্দশার প্রতিটি কথা ও কাজ আমাদের জন্য অনুস্মরনীয় এবং আইনের অকাট্য উৎস।
রাসূল (স) এর মৃত্যুর পর সাহাবাগন রাসূলের পূর্ণাঙ্গ অনুসরনের চেষ্টা করেন
এবং গোটা বিশ্বে ইসলাম প্রচারের কাজ অব্যাহত রাখেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম
ও প্রচেষ্টার ফলে ইসলাম গোটা বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ
হতে ১২৫৮ সাল পর্যন্ত প্রথমে উমাইয়া ও পরে আব্বাসীয়দের মাধ্যমে ইসলাম
প্রচারের চেষ্টা একটি একক শক্তির অধীনে অব্যাহত ছিল। হালাকু খানের বাগদাদ
ধ্বংসের পর এই মুসলিম বিশ্ব পারস্য, ভারতীয় মোঘল ও অটোম্যান সাম্রাজ্যে
বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং সংশ্লিষ্ট শাসনাধীন এলাকায় শাসকগন ইসলাম প্রচারের
কাজ অব্যাহত রাখেন। প্রথমে ক্রুসেডারদের নিকট এবং পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের
পর মুসলমানরা বিশ্বশাসন ব্যবস্থা হতে ছিটকে পড়ে। পরবর্তীতে ইউরোপীয়
ঔপনিবেশিকতার অবসান হলে বিশ্বব্যাপি অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ
স্বাধিনতা লাভ করে এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমুহে ইসলামি বিধি-বিধান
বাস্তবায়নের দাবি জোরদার হয়। রাসূল (স) এর মৃত্যুর পর হতে আজ পর্যন্ত
দেশে দেশে ইসলামকে বিশ্বব্যাপি প্রচারের এবং আল্লাহর সার্বভৌমত্ত্ব
বাস্তবায়নের যে আন্দোলন তাই হচ্ছে ইসলামি-পন্থী আন্দোলন (প্রো-ইসলামিক
মুভমেন্ট)।
২.৩ ইসলাম-পন্থী আন্দোলন বনাম ইসলাম-পন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন / দল :
আল্লাহর প্রেরিত জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। জীবনের বিভিন্ন দিক বা বিষয় নিয়ে ইসলামের এই অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোকে আমরা বলতে পারি ইসলামের দর্শন বা ফিলোসফি। জীবনের এমন কোন কোন দিক বা বিষয় নেই যেখানে বা যে বিষয়ে ইসলামের দিকনির্দেশনা নেই। জীবনের সর্বদিক ও বিষয়ে ইসলামের দর্শনাবলী পরিব্যাপ্ত। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব পর্যায়েই রয়েছে ইসলামের নির্দেশাবলী। জীবনের সকল দিক বা বিষয়ে ইসলামের এই অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রতিষ্ঠার জন্য যখন কোন আন্দোলন হয় তখন তাকে বলা হয় ইসলাম-পন্থী আন্দোলন (প্রো-ইসলামিক মুভমেন্ট) অর্থাৎ ইসলাম-পন্থী আন্দোলন হচ্ছে একটি সামগ্রিক উম্মাহভিত্তিক ধারনা।
আল্লাহর প্রেরিত জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। জীবনের বিভিন্ন দিক বা বিষয় নিয়ে ইসলামের এই অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোকে আমরা বলতে পারি ইসলামের দর্শন বা ফিলোসফি। জীবনের এমন কোন কোন দিক বা বিষয় নেই যেখানে বা যে বিষয়ে ইসলামের দিকনির্দেশনা নেই। জীবনের সর্বদিক ও বিষয়ে ইসলামের দর্শনাবলী পরিব্যাপ্ত। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব পর্যায়েই রয়েছে ইসলামের নির্দেশাবলী। জীবনের সকল দিক বা বিষয়ে ইসলামের এই অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রতিষ্ঠার জন্য যখন কোন আন্দোলন হয় তখন তাকে বলা হয় ইসলাম-পন্থী আন্দোলন (প্রো-ইসলামিক মুভমেন্ট) অর্থাৎ ইসলাম-পন্থী আন্দোলন হচ্ছে একটি সামগ্রিক উম্মাহভিত্তিক ধারনা।
ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতার অবসানের পূর্ব পর্যন্ত গোটা বিশ্বে ইসলাম-ভিত্তিক
সকল আন্দোলনই ছিলো (কম-বেশি) ইসলাম-পন্থী আন্দোলন (প্রো-ইসলামিক
মুভমেন্ট)।
একবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতার অবসান হলে গোটা বিশ্বে ভাষা ও
ভৌগলিক জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক নতুন ধারার রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু হয়।
সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, ভোগবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বিশ্বব্যাপি ক্ষমতার
মসনদে সমাসীন হয়। গোটা বিশ্বে নাস্তিক্যবাদের জন্ম হয় এবং মুসলিম অমুসলিম
সকল দেশে এই মতবাদ জেঁকে বসে।সে। মুসলিম দেশেও রাষ্ট্রব্যবস্থাসহ সকল
জায়গা হতে ইসলামকে বিতাড়িত করা হয় এবং ধর্ম তথা সামগ্রিক ইসলাম-ভিত্তিক
আন্দোলনের বিরোধিতা করা হয়। যেহেতু জাতীয়তাবাদ এক নতুন চালিকা শক্তি
হিসেবে উপস্থিত হয় তাই সামগ্রিক ইসলাম-ভিত্তিক আন্দোলনকে জাতীয়তাবাদের
পরিপন্থী তথা দেশ বা রাষ্ট্রবিরোধী আখ্যা দেওয়া হয় এবং দেশে দেশে
সামগ্রিক ইসলাম-ভিত্তিক আন্দোলনকে নিষিদ্ধ করা হয়।
এমনি প্রেক্ষাপটে দেশে দেশে ইসলাম-পন্থী বুদ্ধিজীবিরা / আলেম- ওলামাবর্গ
জাতীয়তাবাদ কে মেনে নিয়ে আপাতত রাষ্ট্রভিত্তিক আন্দোলন শুরু করেন।
এভাবেই জন্ম লাভ করে আন্তর্জাতিক ইসলামি-দর্শনভিত্তিক আন্দোলনের (যা ইসলাম
-পন্থী আন্দোলন হিসেবে পরিচিত ছিলো ) পরিবর্তে জাতি বা রাষ্ট্রভিত্তিক
ইসলাম-পন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনের/দলের। কাজেই সামগ্রিক ইসলাম-ভিত্তিক
আন্দোলন তথা ইসলাম-পন্থী আন্দোলন (প্রো-ইসলামিক মুভমেন্ট) এবং জাতি বা
রাষ্ট্রভিত্তিক ইসলাম-পন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনের/ দলের মাঝে রয়েছে এক বিরাট
পার্থক্য।
২.৪ মুসলমানদের সংবিধান, ইসলাম-পন্থী আন্দোলনের সংবিধান বনাম ইসলামি-পন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনের/দলের সংবিধান:
মুসলমানের সংজ্ঞা বা ডেফিনেশন এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে একজন মুসলমানের প্রকৃত পরিচয়। মুসলিম হিসেবে পরিচিত হওয়ার পূর্ব শর্তই হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরনের স্বীকৃতি। কাজেই কুরআন ও সুন্নাহই হচ্ছে সকল মুসলমানদের অবিসম্বাদিত, আবশ্যকভাবে অনুস্মরনীয় মৌলিক গাইডবুক তথা সংবিধান (কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্র। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, কিংবা রাষ্ট্রব্যবস্থায় নাগরিক জীবন-যাপন পদ্ধতি সুশৃংখল করার জন্য সময় ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে নানারকম বিধিমালা কোডিফাই করা যেতে পারে, এতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু অবশ্যই তা হতে হবে মৌলিক গাইডবুক তথা সংবিধান (কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্র তথা কুরআন ও সুন্নাহর সাথে সামঞ্জস্যশীল। কিন্তু এর বিপরীতটি হবার কোন সূযোগ নেই। কোন মুসলমানের জন্য অনুস্মরনীয় সংবিধান বা গঠনতন্ত্রের বিষয়টি হচ্ছে অনেকটা কম্পিউটারের বিল্ট-ইন টেকনোলজির মতো। যে কোন ব্রান্ডের একটি ল্যাপটপ কিনলে যেমন অপারেটিং সিস্টেমসহ অন্যান্য অপরিহার্য সফ্টরয়্যারগুলো বিল্ট-ইন পাওয়া যায়, আলাদা করে ইন্স্টল করার প্রয়োজন হয়না, তেমনি কোন ব্যক্তির নিজেকে মুসলিম ঘোষনা করার সাথে সাথে কুরআন ও সুন্নাহকে জীবনের মূল সংবিধান (কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্র হিসেবে মেনে তার পূর্ণাঙ্গ অনুসরনের চেষ্টা করা সেই ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হয়ে পড়ে।
মুসলমানের সংজ্ঞা বা ডেফিনেশন এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে একজন মুসলমানের প্রকৃত পরিচয়। মুসলিম হিসেবে পরিচিত হওয়ার পূর্ব শর্তই হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরনের স্বীকৃতি। কাজেই কুরআন ও সুন্নাহই হচ্ছে সকল মুসলমানদের অবিসম্বাদিত, আবশ্যকভাবে অনুস্মরনীয় মৌলিক গাইডবুক তথা সংবিধান (কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্র। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, কিংবা রাষ্ট্রব্যবস্থায় নাগরিক জীবন-যাপন পদ্ধতি সুশৃংখল করার জন্য সময় ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে নানারকম বিধিমালা কোডিফাই করা যেতে পারে, এতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু অবশ্যই তা হতে হবে মৌলিক গাইডবুক তথা সংবিধান (কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্র তথা কুরআন ও সুন্নাহর সাথে সামঞ্জস্যশীল। কিন্তু এর বিপরীতটি হবার কোন সূযোগ নেই। কোন মুসলমানের জন্য অনুস্মরনীয় সংবিধান বা গঠনতন্ত্রের বিষয়টি হচ্ছে অনেকটা কম্পিউটারের বিল্ট-ইন টেকনোলজির মতো। যে কোন ব্রান্ডের একটি ল্যাপটপ কিনলে যেমন অপারেটিং সিস্টেমসহ অন্যান্য অপরিহার্য সফ্টরয়্যারগুলো বিল্ট-ইন পাওয়া যায়, আলাদা করে ইন্স্টল করার প্রয়োজন হয়না, তেমনি কোন ব্যক্তির নিজেকে মুসলিম ঘোষনা করার সাথে সাথে কুরআন ও সুন্নাহকে জীবনের মূল সংবিধান (কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্র হিসেবে মেনে তার পূর্ণাঙ্গ অনুসরনের চেষ্টা করা সেই ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হয়ে পড়ে।
ইসলাম-পন্থী আন্দোলন (প্রো-ইসলামিক মুভমেন্ট) যেহেতু একটি সামগ্রিক
উম্মাহভিত্তিক ধারনা এবং এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য- উদ্দেশ্য যেহেতু কুরআন ও
সুন্নাহর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের চেষ্টা করা, তাই সকল দেশের ইসলাম-পন্থী
আন্দোলনগুলোর মূল সংবিধান (কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্র হচ্ছে কুরআন ও
সুন্নাহ অথবা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে রচিত কোন বিধিমালার সমস্টি।
অপরদিকে দেশে দেশে গড়ে ওঠা জাতি বা রাষ্ট্রভিত্তিক ইসলাম-পন্থী
রাজনৈতিক আন্দোলন/দলগুলোর জন্মই যেহেতু সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর
অধীনে গড়ে ওঠা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো, কাজেই সে দেশের সংবিধানে
বর্নিত রাষ্ট্রধর্ম যাই হোকনা কেন অথবা সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রভিত্তিক
ইসলাম-পন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন/দলগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ যাই ভেবে
থাকুন না কেন, সামগ্রিক অর্থে কুরআন ও সুন্নাহ কখনোই সে দলের মূল সংবিধান
(কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্র হতে পারেনা। কারন রাষ্ট্র বা দেশের বর্তমান
প্রচলিত ধারনায় বিশ্বাস করার সাথে সাথে এবং প্রচলিত পন্থায় রাজনৈতিক
কার্যক্রমে অংশগ্রহন করার সাথে সাথে ইসলামের সামগ্রিক উম্মাহভিত্তিক ধারনার
বিলুপ্তি ঘটে। তাই রাষ্ট্রভিত্তিক ইসলাম-পন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন/দলগুলোর
দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ যদি তাদের ব্যক্তিক বা সামষ্টিক জীবনের দর্শন
হিসেবে ইসলামকে মেনেও থাকেন, তবু এটা আশা করা যায়না যে, সামগ্রিক অর্থে
কুরআন ও সুন্নাহ সে দলের সংবিধান হবে কিংবা সামগ্রিক অর্থে আল্লাহর
সার্বভৌমত্ত্ব সে রাজনৈতিক দলের সংবিধানে প্রাধান্য পাবে। কারন কোন দেশের
রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অধীনে কোন রাজনৈতিক দল গঠনের মধ্যেই এর সীমাবদ্ধতা
লুকায়িত।
২.৫. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি: একটি রাষ্ট্রভিত্তিক ইসলাম-পন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন/দল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ইতিহাস যাই হোক না কেন
অথবা তাদের নেতাকর্মীরা যে নামেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামিকে অভিহিত করুক
না কেন যেহেতু তাদের মূল সংবিধান (কনস্টিটিউশন) বা গঠনতন্ত্র বাংলাদেশ
নির্বাচন কমিশনের আরপিও মোতাবেক রচিত এবং বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনের
চাহিদার আলোকে গঠনতন্ত্রটি সংশোধিত, কাজেই আমরা কোন ভাবেই বাংলাদেশ
জামায়াতে ইসলামিকে ইসলাম-পন্থী আন্দোলন (প্রো-ইসলামিক মুভমেন্ট) বলতে
পারিনা। বরং একে আমরা সর্বোতভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একটি
ইসলাম-পন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন / দল হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। শুধু তাই
নয়, সমসাময়িককালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি ও একটি ইসলামি-পন্থী
রাজনৈতিক আন্দোলন/দল হিসেবে তাদের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যদিও
জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামিকে একটি ইসলামের
সামগ্রিক দর্শন-ভিত্তিক ইসলাম-পন্থী আন্দোলন (প্রো-ইসলামিক মুভমেন্ট)
হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে থাকেন কিন্তু কোনভাবেই বিচারের মানদন্ডে (স্কেল অব
জাজমেন্ট) বর্তমানে তাদের পরিচালিত সামগ্রিক কার্যক্রম (কমপক্ষে বিগত দশ
বছরের ) বিবেচনা করে বলা যায়না যে, এটি একটি ইসলামের সামগ্রিক
দর্শন-ভিত্তিক ইসলাম-পন্থী আন্দোলন, যদিও এটি অনেক কষ্টদায়ক। (সহায়ক পাঠ:
ভারত ভাগের পর জামায়াত এবং প্রথম রাজনৈতিক পরীক্ষা অতপরঃজামায়াত
অধ্যয়ন-৭ ও আদর্শবাদী দলে প্রথম ভাঙ্গনঃ ইতিহাসের আলোকে জামায়াত
অধ্যয়ন-৬: links: http://www.sonarbangladesh.com/blog/nazmul86/6430 ও http://sonarbangladesh.com/blog/nazmul86/7266 )
৩.১ সংবিধান ও রাষ্ট্রের ইতিকথা:
বর্তমানে সংবিধান শব্দটি যে অর্থ ও ব্যাপ্তিতে ব্যবহৃত হচ্ছে তার জন্ম
কিন্তু সাম্প্রতিক। ব্রিটিশরা অলিখিত সংবিধানের অনুসরনকারী হলেও
ম্যাগনাকাটা (১২১৫), দ্যা প্রভিশন্স অব অক্সফোর্ড, ইংলিশ বিল অব রাইটস
(১৬৮৭), অ্যাকটস অব পার্লামেন্ট এবং ব্রিটিশ আদালতের সামষ্টিক
সিদ্ধান্তসমূহ তাদের নিকট সংবিধানের তথা আইনের উৎস হিসেবে স্বীকৃত।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক বিশ্বে আমেরিকানরা প্রথম সংবিধানিক জাতি হিসেবে
পরিচিত। আমেরিকার সংবিধান, যা রচিত হয় ১৭৮৭ সালে এবং র্যাটিফাইড হয় ১৭৮৯
সালে, বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে পুরানো জাতীয় সংবিধান হিসেবে পরিচিত। যদিও
১৬৩৯ সালের ফান্ডামেন্টাল অর্ডার অব কানেকটিকাট (৩টি শহরের সম্মিলিত ১১
দফা ঘোষনা) পশ্চিমা ধাঁচের ১ম লিখিত সংবিধান হিসেবে পরিচিত কিন্তু জাতীয়
বা রাষ্ট্রীয় সংবিধান হিসাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানই ওলডেস্ট।
মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহে ১৯২৪ সালে খিলাফত ব্যবস্থা বিলুপ্ত হলে
বর্তমানে প্রচলিত অর্থে রাষ্ট্র বা স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম লাভ করে কাজেই
মুসলীম দেশ বা রাষ্ট্র সমূহে লিখিত সংবিধানের (বর্তমানের প্রচলিত অর্থে)
ইতিহাস আরো সাম্প্রতিক।
পশ্চিমা উপনিবেশবাদ হতে স্বাধীনতা লাভ করার পর বিশ্বব্যাপি মুসলিমরা
একটি নতুন ‘ধারনা’ (কনসেপ্ট) ’র সাথে পরিচিত হয়। আর সে ‘ধারনা’ টি হচ্ছে
‘উম্মাহভিত্তিক খিলাফত’ ব্যবস্থার বিপরীতে ভৌগলিকতা ও জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক
‘রাষ্ট্রব্যবস্থা’র ধারনা। পশ্চিমা অর্থে রাষ্ট্র ব্যবস্থার এই ধারনা
মুসলিম কমিউনিটিতে একবারেই নতুন হবার কারণে এর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত
শব্দাবলী বা পরিভাষা যেমন রাজনীতি, সংবিধান,রাষ্ট্র পরিচালনা নীতি, রাষ্ট্র
পরিচালানর জন্য দল নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা,
রাষ্ট্রনায়কের ক্ষমতার ব্যপ্তি ইত্যাদি পরিভাষাগুলোও মুসলিম তথা ইসলামের
ইতিহাসে নতুনভাবে যুক্ত হয়। মুসলিম সমাজ পরিচালনা নীতি এবং মুসলমানদের
আইনের প্রধান উৎস কুরআন ও সুন্নাহর বিধি-বিধানের সাথে পশ্চিমা দেশে জাত ও
পশ্চিমা অর্থে ব্যবহৃত এই পরিভাষাগুলোর ব্যবহারিক অর্থে বৈপরীত্য থাকায়
এগুলোর ব্যবহার মুসলমান সোসাইটি বা দেশে এক নতুন বিভ্রান্তির জন্ম দেয়।
নগর, অঞ্চল, সভ্যতা, সাম্রাজ্য কিংবা উপনিবেশের বিপরীতে নতুন
রাষ্ট্রব্যবস্থার এবং রাষ্ট্র পরিচালনা নীতি তথা সংবিধানের উদ্ভবের পিছনে
রয়েছে ইতিহাস পরিক্রমায় অর্জিত মানুষের নানান অভিজ্ঞতা। ব্রিটিশ কলোনী
হতে আমেরিকার স্বাধীনতালাভ এবং স্বাধীনতা লাভের সাথে সাথে সংবিধান বা
বিভিন্ন দফাভিত্তিক লিখিত দাবী দাওয়া বিধিবদ্ধ করার মূল কারণ হচ্ছে-লিখিত
আইনীগ্রন্থ তথা ক্ষমতার চৌহদ্দির সীমারেখা বিধিবদ্ধ না থাকায় যে কোন সূযোগ
ম্যানিপুলেশন করে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করা যেন রাজা বা রাজ্য শাসকের
পক্ষে সহজ না হয় সেটা নিশ্চিত করা; যেমনটা পরিলক্ষিত হয়েছে ব্রিটিশ রাজা
কিংবা রাজা শাসকদের ক্ষেত্রে। বিধিবদ্ধ সংবিধানের আরো একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে
এই যে, শাসিত জনগোষ্ঠী এবং শাসক উভয়ের ক্ষমতা ও দায়-দায়িত্বের একটি
সীমারেখা বণ্টন এবং (বিশেষ করে) শাসিত জনগনের অধিকারের প্রতিষ্ঠানিকীকরণ।
এখানেই রয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের নন-মুসলিম
কমিউনিটির জীবনবোধের পার্থক্যটি। যেহেতু নন-মুসলিম এই কমিউনিটির নিকট জীবন
তথা সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, শাসক ও শাসিতের দায়িত্ব বন্টন ইত্যাদি
বিষয়ে ঐশী কোন গাইডলাইন নেই, তাই তারা নানা নিয়ম-নীতিমালা তৈরী করে
সামাজিক সুরক্ষার চিন্তা করে এবং তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা দিয়ে নানান
সংবিধান এবং মোরাল কোড বিধিবদ্ধ করে। তারা সাংবিধানিক অধিকারকেই একমাত্র
রক্ষক বা ত্রানকর্তা মনে করে এবং সংবিধান ও অন্যান্য আইনী গ্রন্থেই তাদের
সকল অধিকারের প্রতিফলন ঘটায়। বিধিবদ্ধকৃত এসব কোডের অনেকগুলোই ছিলো
মুসলমানদের আইনের উৎস পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর মৌলিক বিধি-বিধানের বিপরীত।
৩.২ আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সংবিধান বিশ্লেষনে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ভুল:
মুসলমানরা যখন বিংশ শতাব্দীতে খিলাফাত ও উম্মাহভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার
বিপরীতে জাতীয়তাবাদ ও ভৌগলিকতবাদভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়
তখন পশ্চিমাবিশ্ব বিশ্বনেতৃত্বের আসনে সমাসীন, তাই সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত
নতুন দেশসমূহের পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত তৎকালীন মুসলিম শাসকগোষ্ঠী
পশ্চিমা পুঁজিবাদি সভ্যতার ধ্যান-ধারনা, আচার-আচরন ও নিয়ম-নীতিমালা
স্থান-কাল ও ধর্মীয় প্রেক্ষিত বিবেচনা ছাড়াই মুসলিম দেশ সমূহে সংস্থাপন
করেন। ফলে মুসলমানদের ধর্মীয় কালচারের সাথে পশ্চিমা নিয়ম-নীতি মালার এক
শীতল যুদ্ধ শুরু হয়।
পশ্চিমা পুঁজিবাদি সভ্যতায় জাত ও লালিত-পালিত এই রাষ্ট্রনৈতিক ও
সাংবিধানিক নিয়ম-কানুনগুলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহে প্রতিষ্ঠিত হলে
মুসলিম সমাজের নতুন প্রজন্ম মুসলিম কালচার, ইথিকস ও মোরাল কোড ভুলে যেতে
বসে। পশ্চিমা ধাঁচের এই নিয়ম নীতিমালা নতুন প্রজন্মের নিকট আধুনিক, গতিশীল
এবং অনেকটা অপরিহার্য বলে প্রতিভাত হয়। কুরআন ও সুন্নাহর মৌলিক
দৃষ্টিভঙ্গির সাথে বর্তমান পশ্চিমা পুঁজিবাদী ধাঁচের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও
রাজনৈতিক ব্যবস্থার তুলনামূলক অধ্যায়নের কোন সুযোগ না থাকায় মুসলিম
দেশসমূহে তথাকথিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে মেনে নিয়ে
ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হলে দলগুলো নিজস্ব কিংবা প্লুরালিষ্টিক
রাষ্ট্রের সংবিধান রচনার চিন্তার ক্ষেত্রে একটি ভুল করে বসে। তারা তথাকথিত
রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়াকে বা
বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ন-গোষ্ঠী ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে রাসুলের মদীনা
শাসন ব্যবস্থার সাথে তুলনা না করে শুধুমাত্র উম্মাহভিত্তিক মুসলিম
কমিউনিটির জীবন-ব্যবস্থার সাথে তুলনা করে এবং মদীনা চার্টারের অনুসরন না
করে ( ভুলক্রমে ) পশ্চিমা দেশসমূহের মত তথাকথিত দলীয় কিংবা রাষ্ট্রীয়
সংবিধানেই মুসলমানদের ধর্মীয় সকল বিধি-বিধানের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা
করে।
মুসলমান শাসকগোষ্ঠীও কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বর্তমান সমাজের নতুন উদ্ভুত
নানান বিষয়াবলী কে সামনে রেখে আইন প্রণয়ন করতে পারে কিন্তু তা হবে
শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অন্যকোন সম্প্রদায়ের জন্য নয়। কুরআন ও
সুন্নাহর আলোকে রচিত ও বিধিবদ্ধ এই আইন গুলো কোন দলের বা মতের বা সংসদ
সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে প্রনীত হয়না বরং যুগ বা সমাজের
প্রয়োজনের আলোকে ও কেবল মাত্র কুরআন ও সুন্নাহর অনুমোদনের ভিত্তিতেই
প্রনীত হয়। কারো ব্যক্তিক বা সামষ্টিক পছন্দ-অপছন্দ কিংবা মানতে পারার বা
না পারার বিষয়টি এখানে মুখ্য নয় বরং কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোন হতে এবং
সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় অপরিহার্যতার বিষয়টিই এখানে মুখ্য।
৩.৩ মুসলমানদের সংবিধান বনাম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের/ এলাকার/ সমাজের/ সংবিধান:
মুসলমানদের মূল আইনের উৎস কুরআন ও সুন্নাহ। ইহা অপরিবর্তনশীল। স্থান-কালের
বিবেচনায় ইহা মানোত্তীর্ন এবং সকল যুগের, সকল সম্প্রদায়ের, সকল মানুষের
অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইহা প্রয়োগযোগ্য এবং আত্মসমর্পনকারী বিশ্বাসিদের
জন্য ইহার অনুসরন শর্তহীনভাবে বাধ্যতামুলক। ইহা কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা
জাতির মতামতের মুখাপেক্ষীহীন। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন রাষ্ট্রের
কিংবা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে সংবিধান বা গঠনতন্ত্র তা কিন্তু কুরআন ও
সুন্নাহ মত সার্বজনীন কিংবা অপরিবর্তনশীল নয়। এসব সংবিধান সময় ও
প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে এবং সংখ্যাগরিষ্ট মতামতের ভিত্তিতে পরিবর্তনশীল। আর
এই কারণেই রাসুল (সাঃ) এর মদীনা চার্টারে লিপিবদ্ধ ৫৩/৫৭ টি দফার ভিতরে
মুসলমানদের ব্যক্তি, সামষ্টিক কিংবা সামাজিক বাধ্যবাধকতার বিষয়গুলো উল্লেখ
নেই। বরং প্লুরালিষ্টিক সমাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় এবং সংশ্লিষ্ট
সমাজের অন্তর্ভুক্ত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার চুক্তিকৃত বিষয়গুলোই কেবলমাত্র
এখানে স্থান পেয়েছে। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, মুসলমানদের অবশ্যপালনীয়
বিষয়সমূহ কিংবা ইসলামের অপরিহার্য বিষয়গুলো এই চার্টারে অনুল্লেখিত
রয়েছে। কুরআনের নির্দেশমালা ও মদীনা সনদের বিষয়বস্তুর প্রেক্ষিতে তাই বলা
যায়, মুসলমানদের সংবিধান প্রধানত ২ ধরনেরঃ
ক) শুধুমাত্র মুসলিম কমিউনিটির জন্য (কুরআন, সুন্নাহ ও এগুলোর আলোকে রচিত এবং ইহা অপরিবর্তনশীল)
খ) সামগ্রিক প্লুরালিস্টিক সমাজের জন্য (মাল্টিকালচারাল কোন দেশ, সমাজ বা দলের জন্য)
খ) সামগ্রিক প্লুরালিস্টিক সমাজের জন্য (মাল্টিকালচারাল কোন দেশ, সমাজ বা দলের জন্য)
মদীনা চার্টার থেকে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট যে, কোন প্লুরালিস্টিক সমাজের
বা রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকতে পারে না। ধর্ম থাকবে আপন আপন ধর্মীয় গোষ্ঠীর
বা সম্প্রদায়ের কিংবা ব্যক্তির (বিষয়টি অন্য আলোচনায় বিস্তারিত)।
প্লুরালিস্টিক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন গোষ্ঠীর নিজ নিজ ধর্মের নির্দেশনা, তাদের মধ্যকার পারস্পরিক চুক্তি ও শর্তানুসারে সেখানকার রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক আইন বিধিবদ্ধ হবে যা স্থান-কাল ও পরিস্থিতির বিবেচনায় পরিবর্তনশীল। এই বিষয়টি সামনে রেখেই আমরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলসমূহের সংবিধান বা গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন বা সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারি।
প্লুরালিস্টিক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন গোষ্ঠীর নিজ নিজ ধর্মের নির্দেশনা, তাদের মধ্যকার পারস্পরিক চুক্তি ও শর্তানুসারে সেখানকার রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক আইন বিধিবদ্ধ হবে যা স্থান-কাল ও পরিস্থিতির বিবেচনায় পরিবর্তনশীল। এই বিষয়টি সামনে রেখেই আমরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলসমূহের সংবিধান বা গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন বা সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারি।
৩.৪ রাষ্ট্রধর্ম বনাম মদিনা চার্টার :
১৯২৪ সালে খিলাফাত ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংসের পর তুরস্ক নিজেকে
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদি দেশ হিসেবে পরিচিত করে এবং সে দেশে ইসলামী কালচারের
বিপরীতে পশ্চিমা কালচারের অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টা করে। তাই দেশ হিসেবে কোন
দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্মের ব্যবহার সর্ব প্রথম দেখা যায়- মিশরে। ১৯১৯
সালে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯২৩ সালে মিশরের সংবিধান রচিত হয় এবং তার ১৪৯
নং আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয় যে, Islam is the religion of the state &
Arabic is its official language । সর্বশেষ ২০০৭ সালে এটা পরিবর্তন করে
লিখা হয় যে, Islam is the main source of Legislation. পরবর্তীতে ১৯৪৭
সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করার পর ১৯৫৬ সালের ২৩শে মার্চ পাকিস্তানের
১ম সংবিধান গৃহীত হয় এবং তাতে পাকিস্তানকে Islamic Republic বলে উল্লেখ
করা হয়। বর্তমানে সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ প্রায় ৩০টি রাষ্ট্রের সংবিধানে
ইসলামকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ হিসাবে ঘোষনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, বর্তমান বিশ্বে ৫৭টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং এদের
অর্ধেকেরও বেশি দেশের সংবিধানে ‘স্টেট-রিলিজিয়ন-ইসলাম’ উল্লেখ থাকলেও
একমাত্র ইরান ছাড়া অন্য কোন দেশের সকল সামজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীতে
ইসলামের সামগ্রীক নীতিমালার কোন প্রতিফলন নেই। তাছাড়া যেসব দেশের
রাষ্ট্রীয় সংবিধানে ‘স্টেট-রিলিজিয়ান ইসলাম’ উল্লেখ রয়েছে কিংবা
‘সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ’ বলে স্বীকৃতি রয়েছে সেসব দেশের সংবিধানের
সংশিষ্ট ধারাগুলোও কিন্তু সবসময় একই রকমভাবে অপরিবর্তনীয় ছিলনা। বরং
বিভিন্ন শাসনামলে সংশিষ্ট ধারাগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত
দু:খের বিষয়, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম যখন বাদ দেয়া হয়েছে তখন যেমন
মুসলিম / ইসলামি কালচারকে রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা থেকে দুর করার চেষ্টা করা
হয়েছে, পরবর্তীতে যখন রাষ্ট্রধর্ম শব্দটি সংবিধানে পুনরায় যোগ করা
হয়েছে তখন বিলুপ্ত ইসলামী কালচার পুনঃপ্রতিষ্ঠার কোন সামগ্রীক উদ্যোগ
নেয়া হয়নি। আর উপনিবেশের কবল থেকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহ যখন
স্বাধীন দেশ হিসাবে তথাকথিত স্বাধীনতা লাভ করে তখন তৎকালীন শাসকেরা তথাকথিত
স্বাধীন দেশগুলোর সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ধারাটি যোগ করে কেবলমাত্র
তাদের ব্যক্তিক ও শাসনকার্যগত সুবিধা প্রাপ্তির আশায়। কারন মুসলিমমাত্রই
কুরআন ও সুন্নাহকে পার্থিব সকল আইনের উপরে স্থান দেয় এবং একমাত্র
অনুস্মরনীয় আইনগ্রন্থ হিসাবে মান্য করে। যেহেতু কুরআন ও সুন্নাহর
পূর্নাঙ্গ অনুসরন অর্থে নয় বরং রাষ্ট্রনায়কদের স্বার্থেই
‘রাষ্ট্রধর্ম-ইসলাম’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, তাই এটি ইসলামি বিধান
সম্মত কিনা তা যাচাই- বাচাই ছাড়াই সংবিধানে যোগ করে মুসলমানদের আবেগকে
কাজে লাগানো হয়েছে।
পরবর্তীতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে যখন ইসলামপন্থী মুসলমনারা কোন
রাজনৈতিক দল চালু করেছে তখন তারাও তাদের দলীয় সংবিধানে আল্লাহর
সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, ইসলামের মৌলিক বিধানসমূহ কোন গভীর
চিন্তা-গবেষনা ছাড়াই দলীয় সংবিধানে যুক্ত করেছে। এক্ষেত্রে তারা
রাষ্ট্রীয় সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের ঘোষনাকে ইসলামি বিধানসম্মত
মনে করেছে এবং তাতে সমর্থনও দিয়েছে। অথচ রাষ্ট্রীয় সংবিধানের
“রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” যেমন সংসদের সংখ্যাগরিষ্ট মতামতের উপর নির্ভরশীল তেমনি
ইসলামপন্থী দলগুলোর সংবিধানে বর্ণিত ‘আল্লাহর সার্বভৌমত্ব’ সংশ্লিষ্ট
দেশের নির্বাচন কমিশনের আইনের আওতাধীন। এই উভয় ক্ষেত্রেই উপরোক্ত
শব্দাবলীর ব্যবহার তাই কুরআন ও সুন্নাহর সার্বজনীন বিধিমালার পরিপন্থী।
কোন দেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানে কিংবা কোন রাজনৈতিক দলের সংবিধান বা
গঠনতন্ত্রে ‘সার্বভৌমত্ব আল্লাহর’ কিংবা ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ইত্যাকার
শব্দগুলির উপস্থিতি-অনুপস্থিতি কিংবা সংযোজন-বিয়োজনের উপর রাষ্ট্র কিংবা
দলের ইসলামপন্থী হওয়া বা না হওয়া নির্ভর করে না। বরং প্রকৃতপক্ষে তা
নির্ভর করে রাষ্ট্র বা দলের অভ্যন্তরীন কার্যাবলীতে কুরআন ও সুন্নাহর
বিধিবিধান পরিপালনের উপর। তাছাড়া কোন রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক দল এসব শব্দ
তাদের সংবিধানে সংযোজন না করলেও ইসলামের যেমন কোন ক্ষতি হয়না তেমনি
মুসলমান হিসাবে ব্যক্তিক বা সামষ্টিক জীবনে কুরআন-সুন্নাহর বিধিবিধান
পরিপালনের বাধ্যবাধকতাও বিন্দু পরিমাণ হ্রাস পায়না এবং আল্লাহর সার্বভৌম
ক্ষমতার কোন পরিবর্তনও হয়না। বরং এগুলোর অযথার্থ ব্যবহার ইসলামী বিধিবিধান
নিয়ে মুসলিম কমিউনিটিতে এক ধরনের বিভ্রান্তি (মিসকনসেপশান) তৈরী করে। আর
এখানেই ফুটে ওঠে রাসুলের মদীনা সনদের প্রাসঙ্গিকতা।
৩.৫ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দলীয় গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন:
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে তাই বলা যায় যে, ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল হিসাবে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দলীয় গঠনতন্ত্রে ‘আল্লাহর সার্বভৌমত্ব’
অন্যান্য কিছু ধারার কিছু শব্দাবলীর বিয়োজন কিংবা নতুন শব্দের সংযোজনে
দলটির ব্যক্তিক বা দলীয় চরিত্রে কোন প্রভাব পড়বেনা। বরং ইসলামপন্থী
রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে এসব শব্দের অনুপস্থিতি মুসলিম কমিউনিটিতে
বিরাজমান এক ধরনের বিতর্ক বা বিভ্রান্তি অপনোদন করবে। তাই দলীয়
গঠনতন্ত্রের ১৮ তম সংশোধনীর ফলে জামায়াতের কর্মী কিংবা নেতাদের হতাশ হবার
কিংবা ভয় পাবার কিছুই নেই। আবার, ক্ষমতায় গেলে বা সুযোগ পেলে এসব শব্দ
পুনরায় নিজস্ব দলীয় সংবিধান কিংবা রাষ্ট্রীয় সংবিধানে সংযোজন করা
হবে-এমন বাগাড়ম্বর করার ও কোন প্রয়োজন নেই। কারন, কুরআন-সুন্নাহর
দৃষ্টিতে কোন দলীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় সংবিধানের কোন গুরুত্ব নেই বরং
গুরুত্ব রয়েছে ব্যক্তিক বা সামষ্টিক জীবনে কুরআন-সুন্নাহর বিধিবিধান
অনুসরনের। অন্যদিকে, জামায়াত বিরোধী দল বা ব্যক্তি যারা জামায়াতের
গঠনতন্ত্রে (বাধ্যগতভাবে) সংশোধনীর কারণে আহলাদিত, তাদেরও লম্প ঝম্প করার
কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ গঠনতন্ত্রের সংশোধনীর ফলে সরকার কিংবা বিরোধী দল
নয় বরং ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতই দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল ভোগ
করবে।
তবে ইসলামপন্থী দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও তরুণ স্বাপ্নিকদের আনন্দিত হবার
যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে কারণ এর ফলে যে কোন পরিস্থিতিতে ইসলামী বিধি বিধানের
সার্বজনীনতা যে সমসাময়িক যে কোন রাজনৈতিক দল বা রাষ্ট্রের ক্ষমতার / সীমার
উর্ধ্বে তা অনুধাবন করা সহজ হবে এবং ফলশ্রুতিতে রাসুল (সাঃ) এর মদীনা
সনদের উপযোগিতা মুসলিম কমিউনিটির নিকট নতুন করে প্রতিভাত হবে।
৩.৬ ফাইন্ডিংস:
ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান গবেষনার মাধ্যমে এমন
টেকসই নীতিমালা অনুসরন করতে হবে যাতে তা স্বল্প মেয়াদের পরিবর্তে
দীর্ঘমেয়াদে কুরআন ও সুন্নাহর বিধিবিধানের সাথে প্রাসিঙ্গক হয়। এর ফলে
ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের জন্য সঠিক কর্মপদ্ধতি রচনা করতে পারবে
এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসলামপন্থীদের আজন্মলালিত ইসলাম-ভিত্তিক
কল্যানকামী রাষ্ট্রব্যবস্থা (প্রকৃতপক্ষে সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থা কারন ‘
ইসলামী রাষ্ট্র’ শব্দটি বর্তমান যুগের ভাষার একটি অপপ্রয়োগ) প্রতিষ্ঠার
স্বপ্নপূরণ ত্বরাণিত হবে।
http://sonarbangladesh.com/blog/mramir/142325