গুলেন ও রাজনীতি:
তুরস্কের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থকদের নিকট বুদ্ধিজীবি ও স্কলার হিসাবে ফেতুল্লাহ গুলেন সম্মানিত ও প্রশংসিত । শুধুমাত্র কিছু চরমপন্থী সেকিউলার এলিট ও চরমপন্থী মুসলিম গ্রুপ ফেতুল্লাহ গুলেন ও তার গুলেন মুভমেন্টের সমালোচক ।
গুলেন প্রসঙ্গক্রমে পুর্নব্যক্ত করেন যে, ইসলামকে নিজের মতো আদর্শায়িত করলে এবং একে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করলে ইসলামের মৌলিক ক্ষতি সাধিত হয় । অনেক বারই তিনি ধর্মের রাজনীতিকীকরনের বিরোধীতা করেন। গুলেনের রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে হাকান ইয়াভূজ ২০০৪ সালে ‘Religioscope’ এর সাথে এক সাক্ষাতকারে বলেন, “গুলের চান ধর্মকে রাজনীতির উর্দ্ধে রাখতে, কারণ তিনি এ বিষয়ে অবহিত যে, রাজনীতি ধর্মকে দূর্নীতিগ্রস্ত করে তোলে”।
গুলেন মুভমেন্ট বিষয়ক এক গবেষণায় ড. রাইনার হারম্যান বলেন, গুলেন মুভমেন্ট হচ্ছে একটি সোশাল ও অরাজনৈতিক আন্দোলন (social & apolitical movement).
গুলেন প্রকাশ্য জনসভায় বলেন যে, “আমরা সকল পার্টি বা দলের নিকটবর্তী বা কাছাকাছি। আমরা বলছিনা যে, সকল দলের কাছ থেকে সমদুরবর্তী বরং আমরা বলছি সকল দলের নিকটবর্তী । কারণ যে কোন দল বা পার্টির অনুসারি বা সমর্থকরা আমাদের অন্তর্ভূক্ত। জনগণের কোন দলীয় সংযুক্তি কিংবা দলীয় আদর্শের প্রতি ঝোঁক আমাদের বন্ধু / সহকর্মী হতে বাধা নয়।”
গুলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেন। তাদের মধ্যে মরহুম তারগুত ওজাল (মধ্য-ডানপন্থী), আলপারস্লান তুর্ক (জাতীয়তাবাদী), বুলেন্দ এসেভিট (বামপন্থী), সুলেমিন ডেমিরেল (মধ্য-ডানপন্থী), তানসু সিলার (মধ্য-ডানপন্থী), মাসুদ এলমাস। তিনি তাদের কারো সাথেই রাজনীতির ‘প্রাত্যহিক কার্যাবলী’ নিয়ে কথা বলেননি। তিনি বরং এই সাক্ষাতকারে তাদের সাথে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। সত্য যে, গুলেন তুরগুত ওজাল ও বুলেন্দ এসেভিটকে খুব সম্মান করতেন। কিন্ত তিনি কখনো তাদের রাজনৈতিক মতবাদের সমর্থক হননি। অন্যদিকে তুরগুত ওজাল এবং বুলেন্দ এসেভিটও গুলেনের চিন্তা ও কার্যাবলীর প্রশংসা করতেন এবং তাঁকে অনেক সম্মান করতেন। তবে তাদের কেউই গুলেনের নিকট থেকে নির্বাচনী কিংবা রাজনৈতিক সমর্থন চাননি।
তুরস্কের আধুনিকতা ও গনতন্ত্রের বিকাশে অবদান রাখার জন্য অনেক স্কলারদের নিকট তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।
রাজনীতি প্রসঙ্গে গুলেনের যখন এই অবস্থান, তখন এটা ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে যে, গুলেন মুভমেন্ট এর অনুসারিরা রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করেনা। অন্য যে কোন নাগরিকের মতই গুলেন মুভমেন্টের অনুসারিরা ব্যক্তিকভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে এবং যে কোন গনতান্ত্রিক নির্বাচনে ভোট দেয়। আবার এটা চিন্তা করাও ভুল যে, গুলেন ও তার অনুসারিরা নির্দিষ্ট কোন দলের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে ভোট করে। গুলেন মুভমেন্টের অনুসারিদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের লোকজন। তারা তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের সংযুক্তি বা আসক্তি অনুযায়ি ভোট দিয়ে থাকেন।
তুরস্কের সাধারণ জনগনের মতোই, গুলেন মুভমেন্টের অনুসারিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দল বা ব্যক্তির পক্ষে নির্বাচন করে থাকে । উদাহরন স্বরুপ তুরগুত ওজালের শাসনামলে তুরগুত ওজালের ডানপন্থী গনতান্ত্রিক দলের জন্য ভোট করে। অন্য নির্বাচনে তারা বুলেন্দ এসেভিটের বামপন্থী গণতান্ত্রিক দলের জন্য ভোট করে। বর্তমানে মনে করা হয় যে, তারা একে পার্টির পক্ষে নির্বাচন করে । গুলেন মুভমেন্টর নির্বাচন কেন্দ্রিক এসব আলোচনা বা তথ্য, সর্বোচ্চ পক্ষে, এক ধরনের ‘অভিজ্ঞ অনুমান’ ।
এসব স্টেটমেন্টকে তথ্য ভিত্তিক ভাবে সমর্থন করার জন্য ইতোপূর্বে সম্পাদিত কোন ডাটা বা জরিপ নেই ।
গুলেন মুভমেন্টের অনুসারিরা যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলের পক্ষে ভোট করে বিষয়টি শুধু এমন নয়-তারা বিভিন্ন আদর্শের দলের জন্যও ভোট করে। এমনও নয় যে, গুলেন মুভমেন্ট শুধু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দলের পক্ষেই নির্বাচন করে। বরং যে সকল দল নিজেদের ‘ইসলামিক’ বা ‘মুসলিম’ হিসাবে তুলে ধরে, গুলেন ও গুলেন মুভমেন্ট সেসব থেকে দূরে থাকে।
বিভিন্ন আর্টিক্যালে প্রকাশিত লেখায় গুলেন বিরোধীরা এই বলে অভিযোগ করে যে, ‘গুলেন একে পার্টি (বর্তমান ক্ষমতাসীন) কে সমর্থদান করছেন এবং তুরস্ক কে একটি ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ হিসাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন’।
এই অভিযোগ যারা করেন তারা ভালভাবে জানেন যে, ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার যে প্রচলিত কনসেপ্ট গুলেন তার প্রচন্ড বিরোধী ।
“গুলেনের মতে, ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ কথাটি ইসলামি কনসেপ্ট এর বিরোধী । তিনি বলেন, তুমি তৈরী করতে পার একজন সচেতন মুসলিম, তুমি তৈরি করতে পার মুসলিমদের নেটওয়ার্ক। তুমি গড়তে পার মুসলিম নৈতিকতা এবং ইসলাম ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে সহাবস্থানের মডেল । কিন্তু ইসলামকে যখন দাঁড় করানো হয় রাষ্ট্রের মডেল হিসেবে- তখন এটা আর ইসলাম থাকেনা।”
তার উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিম সচেতনতাবোধ জাগিয়ে তোলা, আধুনিকতা, গণতন্ত্র ও মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে মুসলমানদের অংশগ্রহণ বাড়ানো যাতে এসব বৈশ্বিক প্রক্রিয়াসমূহ থেকে মুসলমানরা লাভবান হতে পারে ।
গুলেন মুভমেন্ট ও রাষ্ট্রক্ষমতা:
গুলেন মুভমেন্ট যদিও রাজনৈতিক শক্তির জন্য লড়াই করেনা; তবু ও তা তুরস্কের কর্তৃত্ববাদি শক্তির মিলিটারি শাসন ব্যবস্থাকে হুমকীর সম্মুখীন করেছে। তুরস্কের শাসন ব্যবস্থায় মিলিটারি শাসকদের চাপিয়ে দেয়া ‘আপ-বটম’ এ্যাপ্রোচ এর পরিবর্তে বর্তমানে ‘বটম-আপ’ এ্যাপ্রোচ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এই ‘বটম-আপ’ এ্যাপ্রোচ এর রুপায়ক হলেন গুলেন ও তার আন্দোলন।
হাকান ইয়াভূজ এর মতে, নিম্নলিখিত কারণে গুলেন ও তার আন্দোলন কর্তৃত্ববাদি মিলিটারি শাসন ব্যবস্থার জন্য হুমকী:
(ক) মিলিটারি শাসকরা তাদের নির্যাতন ও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার যৌক্তিকতা প্রমাণ করার জন্য পশ্চাৎপদ ও মৌলবাদি ইসলামের লালন করে। কিন্তু গুলেন ও তার ‘হিজমেত বা সেবা’ আন্দোলনে এসবের কোন অস্তিত্ব নেই। ফলে কর্তৃত্ববাদি মিলিটারি শাসকরা আরো বেশি রাগান্বিত হন।
(খ) গুলেন তাঁর শিক্ষা ও ‘হিজমেত বা সেবা’ আন্দোলন এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার লোকজনদেরও বিদেশী ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন এবং তাদেরকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদান করেন। এই ঘটনাও প্রতিষ্ঠিত শাসকদের রাগিয়ে তোলে কারণ তারা চায় দেশের জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে । তারা চাইনা দেশের সম্পদ জনগণের সাথে ভাগাভাগি করতে। গুলেন সবসময় গরীব লোকদের পক্ষে- যেখানে শাসকরা চাইনা গুলেন ও তার সংগঠন দেশের প্রান্তিক লোকজনদের জন্য কাজ করুক। দেশের প্রান্তিক লোকজনদের জন্য শিক্ষার সূযোগ উম্মুক্ত করে দিক। এটা সামরিক শাসকদেরও হতাশ করে তুলেছে।
(গ) গুলেন মুভমেন্ট যদিও ক্ষমতার জন্য লড়াই করেনা, কিন্তু তাদের শিক্ষা কার্যক্রম, সংখ্যালঘুদের সেবা, দারিদ্রদের সাহায্য এবং সংঘাতের মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম তাদেরকে মিলিটারি এলিট সোসাইটির বিপরীতে এনে দাঁড় করিয়েছে ।
(ঘ) আসলে প্রশ্নটি এমন নয় যে, গুলেন ক্ষমতার জন্য লড়াই করছে কিনা? বরং কথাটি হচ্ছে তারা তুরস্কে গত ১০০ বছর ধরে যে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে তা তারা ছাড়তে চাচ্ছেনা।
গুলেন আসলে ক্ষমতার জন্য লড়াই করছেন না । তিনি তুরস্কের জনগনকে শিক্ষা-দীক্ষা, সংস্কৃতি, ও জীবনযাত্রার উন্নয়নের মাধ্যমে সচেতন করে তোলার অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর এই সচেতন গোষ্ঠী চাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব । আর এটাই হচ্ছে এলিট, কর্তৃত্ববাদী, সামরিক শাসকদের গুলেন বিরোধীতার মূল কারণ।
(২০মে, ২০১৩ সালে হাকান ইয়াভূজের লেখা ‘What is Fetullah Gulen’s Stance on Political Issues’ এবং ১৬ জুলাই, ২০১০ সালে আব্দুল্লাহ ওজানের লেখা ‘Fetullah Gulen’s Relation to power & politics’ অবলম্বনে রচিত)
তুরস্কের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থকদের নিকট বুদ্ধিজীবি ও স্কলার হিসাবে ফেতুল্লাহ গুলেন সম্মানিত ও প্রশংসিত । শুধুমাত্র কিছু চরমপন্থী সেকিউলার এলিট ও চরমপন্থী মুসলিম গ্রুপ ফেতুল্লাহ গুলেন ও তার গুলেন মুভমেন্টের সমালোচক ।
গুলেন প্রসঙ্গক্রমে পুর্নব্যক্ত করেন যে, ইসলামকে নিজের মতো আদর্শায়িত করলে এবং একে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করলে ইসলামের মৌলিক ক্ষতি সাধিত হয় । অনেক বারই তিনি ধর্মের রাজনীতিকীকরনের বিরোধীতা করেন। গুলেনের রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে হাকান ইয়াভূজ ২০০৪ সালে ‘Religioscope’ এর সাথে এক সাক্ষাতকারে বলেন, “গুলের চান ধর্মকে রাজনীতির উর্দ্ধে রাখতে, কারণ তিনি এ বিষয়ে অবহিত যে, রাজনীতি ধর্মকে দূর্নীতিগ্রস্ত করে তোলে”।
গুলেন মুভমেন্ট বিষয়ক এক গবেষণায় ড. রাইনার হারম্যান বলেন, গুলেন মুভমেন্ট হচ্ছে একটি সোশাল ও অরাজনৈতিক আন্দোলন (social & apolitical movement).
গুলেন প্রকাশ্য জনসভায় বলেন যে, “আমরা সকল পার্টি বা দলের নিকটবর্তী বা কাছাকাছি। আমরা বলছিনা যে, সকল দলের কাছ থেকে সমদুরবর্তী বরং আমরা বলছি সকল দলের নিকটবর্তী । কারণ যে কোন দল বা পার্টির অনুসারি বা সমর্থকরা আমাদের অন্তর্ভূক্ত। জনগণের কোন দলীয় সংযুক্তি কিংবা দলীয় আদর্শের প্রতি ঝোঁক আমাদের বন্ধু / সহকর্মী হতে বাধা নয়।”
গুলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেন। তাদের মধ্যে মরহুম তারগুত ওজাল (মধ্য-ডানপন্থী), আলপারস্লান তুর্ক (জাতীয়তাবাদী), বুলেন্দ এসেভিট (বামপন্থী), সুলেমিন ডেমিরেল (মধ্য-ডানপন্থী), তানসু সিলার (মধ্য-ডানপন্থী), মাসুদ এলমাস। তিনি তাদের কারো সাথেই রাজনীতির ‘প্রাত্যহিক কার্যাবলী’ নিয়ে কথা বলেননি। তিনি বরং এই সাক্ষাতকারে তাদের সাথে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। সত্য যে, গুলেন তুরগুত ওজাল ও বুলেন্দ এসেভিটকে খুব সম্মান করতেন। কিন্ত তিনি কখনো তাদের রাজনৈতিক মতবাদের সমর্থক হননি। অন্যদিকে তুরগুত ওজাল এবং বুলেন্দ এসেভিটও গুলেনের চিন্তা ও কার্যাবলীর প্রশংসা করতেন এবং তাঁকে অনেক সম্মান করতেন। তবে তাদের কেউই গুলেনের নিকট থেকে নির্বাচনী কিংবা রাজনৈতিক সমর্থন চাননি।
তুরস্কের আধুনিকতা ও গনতন্ত্রের বিকাশে অবদান রাখার জন্য অনেক স্কলারদের নিকট তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।
রাজনীতি প্রসঙ্গে গুলেনের যখন এই অবস্থান, তখন এটা ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে যে, গুলেন মুভমেন্ট এর অনুসারিরা রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করেনা। অন্য যে কোন নাগরিকের মতই গুলেন মুভমেন্টের অনুসারিরা ব্যক্তিকভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে এবং যে কোন গনতান্ত্রিক নির্বাচনে ভোট দেয়। আবার এটা চিন্তা করাও ভুল যে, গুলেন ও তার অনুসারিরা নির্দিষ্ট কোন দলের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে ভোট করে। গুলেন মুভমেন্টের অনুসারিদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের লোকজন। তারা তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের সংযুক্তি বা আসক্তি অনুযায়ি ভোট দিয়ে থাকেন।
তুরস্কের সাধারণ জনগনের মতোই, গুলেন মুভমেন্টের অনুসারিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দল বা ব্যক্তির পক্ষে নির্বাচন করে থাকে । উদাহরন স্বরুপ তুরগুত ওজালের শাসনামলে তুরগুত ওজালের ডানপন্থী গনতান্ত্রিক দলের জন্য ভোট করে। অন্য নির্বাচনে তারা বুলেন্দ এসেভিটের বামপন্থী গণতান্ত্রিক দলের জন্য ভোট করে। বর্তমানে মনে করা হয় যে, তারা একে পার্টির পক্ষে নির্বাচন করে । গুলেন মুভমেন্টর নির্বাচন কেন্দ্রিক এসব আলোচনা বা তথ্য, সর্বোচ্চ পক্ষে, এক ধরনের ‘অভিজ্ঞ অনুমান’ ।
এসব স্টেটমেন্টকে তথ্য ভিত্তিক ভাবে সমর্থন করার জন্য ইতোপূর্বে সম্পাদিত কোন ডাটা বা জরিপ নেই ।
গুলেন মুভমেন্টের অনুসারিরা যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলের পক্ষে ভোট করে বিষয়টি শুধু এমন নয়-তারা বিভিন্ন আদর্শের দলের জন্যও ভোট করে। এমনও নয় যে, গুলেন মুভমেন্ট শুধু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দলের পক্ষেই নির্বাচন করে। বরং যে সকল দল নিজেদের ‘ইসলামিক’ বা ‘মুসলিম’ হিসাবে তুলে ধরে, গুলেন ও গুলেন মুভমেন্ট সেসব থেকে দূরে থাকে।
বিভিন্ন আর্টিক্যালে প্রকাশিত লেখায় গুলেন বিরোধীরা এই বলে অভিযোগ করে যে, ‘গুলেন একে পার্টি (বর্তমান ক্ষমতাসীন) কে সমর্থদান করছেন এবং তুরস্ক কে একটি ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ হিসাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন’।
এই অভিযোগ যারা করেন তারা ভালভাবে জানেন যে, ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার যে প্রচলিত কনসেপ্ট গুলেন তার প্রচন্ড বিরোধী ।
“গুলেনের মতে, ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ কথাটি ইসলামি কনসেপ্ট এর বিরোধী । তিনি বলেন, তুমি তৈরী করতে পার একজন সচেতন মুসলিম, তুমি তৈরি করতে পার মুসলিমদের নেটওয়ার্ক। তুমি গড়তে পার মুসলিম নৈতিকতা এবং ইসলাম ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে সহাবস্থানের মডেল । কিন্তু ইসলামকে যখন দাঁড় করানো হয় রাষ্ট্রের মডেল হিসেবে- তখন এটা আর ইসলাম থাকেনা।”
তার উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিম সচেতনতাবোধ জাগিয়ে তোলা, আধুনিকতা, গণতন্ত্র ও মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে মুসলমানদের অংশগ্রহণ বাড়ানো যাতে এসব বৈশ্বিক প্রক্রিয়াসমূহ থেকে মুসলমানরা লাভবান হতে পারে ।
গুলেন মুভমেন্ট ও রাষ্ট্রক্ষমতা:
গুলেন মুভমেন্ট যদিও রাজনৈতিক শক্তির জন্য লড়াই করেনা; তবু ও তা তুরস্কের কর্তৃত্ববাদি শক্তির মিলিটারি শাসন ব্যবস্থাকে হুমকীর সম্মুখীন করেছে। তুরস্কের শাসন ব্যবস্থায় মিলিটারি শাসকদের চাপিয়ে দেয়া ‘আপ-বটম’ এ্যাপ্রোচ এর পরিবর্তে বর্তমানে ‘বটম-আপ’ এ্যাপ্রোচ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এই ‘বটম-আপ’ এ্যাপ্রোচ এর রুপায়ক হলেন গুলেন ও তার আন্দোলন।
হাকান ইয়াভূজ এর মতে, নিম্নলিখিত কারণে গুলেন ও তার আন্দোলন কর্তৃত্ববাদি মিলিটারি শাসন ব্যবস্থার জন্য হুমকী:
(ক) মিলিটারি শাসকরা তাদের নির্যাতন ও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার যৌক্তিকতা প্রমাণ করার জন্য পশ্চাৎপদ ও মৌলবাদি ইসলামের লালন করে। কিন্তু গুলেন ও তার ‘হিজমেত বা সেবা’ আন্দোলনে এসবের কোন অস্তিত্ব নেই। ফলে কর্তৃত্ববাদি মিলিটারি শাসকরা আরো বেশি রাগান্বিত হন।
(খ) গুলেন তাঁর শিক্ষা ও ‘হিজমেত বা সেবা’ আন্দোলন এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার লোকজনদেরও বিদেশী ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন এবং তাদেরকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদান করেন। এই ঘটনাও প্রতিষ্ঠিত শাসকদের রাগিয়ে তোলে কারণ তারা চায় দেশের জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে । তারা চাইনা দেশের সম্পদ জনগণের সাথে ভাগাভাগি করতে। গুলেন সবসময় গরীব লোকদের পক্ষে- যেখানে শাসকরা চাইনা গুলেন ও তার সংগঠন দেশের প্রান্তিক লোকজনদের জন্য কাজ করুক। দেশের প্রান্তিক লোকজনদের জন্য শিক্ষার সূযোগ উম্মুক্ত করে দিক। এটা সামরিক শাসকদেরও হতাশ করে তুলেছে।
(গ) গুলেন মুভমেন্ট যদিও ক্ষমতার জন্য লড়াই করেনা, কিন্তু তাদের শিক্ষা কার্যক্রম, সংখ্যালঘুদের সেবা, দারিদ্রদের সাহায্য এবং সংঘাতের মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম তাদেরকে মিলিটারি এলিট সোসাইটির বিপরীতে এনে দাঁড় করিয়েছে ।
(ঘ) আসলে প্রশ্নটি এমন নয় যে, গুলেন ক্ষমতার জন্য লড়াই করছে কিনা? বরং কথাটি হচ্ছে তারা তুরস্কে গত ১০০ বছর ধরে যে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে তা তারা ছাড়তে চাচ্ছেনা।
গুলেন আসলে ক্ষমতার জন্য লড়াই করছেন না । তিনি তুরস্কের জনগনকে শিক্ষা-দীক্ষা, সংস্কৃতি, ও জীবনযাত্রার উন্নয়নের মাধ্যমে সচেতন করে তোলার অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর এই সচেতন গোষ্ঠী চাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব । আর এটাই হচ্ছে এলিট, কর্তৃত্ববাদী, সামরিক শাসকদের গুলেন বিরোধীতার মূল কারণ।
(২০মে, ২০১৩ সালে হাকান ইয়াভূজের লেখা ‘What is Fetullah Gulen’s Stance on Political Issues’ এবং ১৬ জুলাই, ২০১০ সালে আব্দুল্লাহ ওজানের লেখা ‘Fetullah Gulen’s Relation to power & politics’ অবলম্বনে রচিত)