Saturday, December 21, 2013

গনভিক্তি রচনার পথে অন্তরায় ও প্রতিকার

[মনিরুজ্জামান মনির ভাইয়ের লিখা পোস্ট (IINIB) হতে কপি করা হলো-আবু সুলাইমান ২১-১২২০১৩] 
১। দলে অন্তর্ভুক্তির পদ্ধতি খুব সহজ নয় । দেশে ও প্রবাসে জনশক্তির যে স্তর বিন্যাস রয়েছে তার বাহিরেও সহজ ভাবে সংগঠনে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া রাখা যেত।
২। জনগণের ধারনা জামায়াতে অন্তর্ভুক্তির সাথে সাথে ব্যাপক লেখা পড়া নিয়মিত বৈঠকে উপস্থিত হওয়া, নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়ে নেতার আদেশ মত সকল কাজ করা। বিকল্প প্রোগ্রামের মাধ্যমে জনগণের ভীতি দূর করে জনগণকে সংগঠনে সম্পৃক্ত করা সম্ভব। 
৩। দলের কর্মসূচী আপামর জনগণের নিকট স্পষ্ট নয়। ৩ দফা দাওয়াত ও ৪ দফা কর্মসূচী এখনো জনশক্তির ভিতরে চর্চা লক্ষ্য করা যায়। 
৪। ইসলামের শিক্ষাকে জনগণের মাঝে সহজ ভাবে পেশ করতে না পারা। যদি ইসলামের শিক্ষাকে সহজ ভাবে ব্যাক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত মানুষের কল্যানের শিখাগুলোকে বুঝিয়ে বলা সম্ভব হতো তাহলে জনগণের সম্পৃক্ততা ব্যাপক হতো । 
৫। যুব সমাজকে সঠিক আশার আলো দেখাতে না পারা । দেশের ছোট মাঝারো ও বড় আকারের ব্যবসা বানিজ্য এবং দলীয় কাঠামোর বিভিন্ন পর্যায়ের কাজে আরো সম্পৃক্ত করা। 
৬। সমাজে চলমান সকল প্রকার অ-সামাজিক কার্যকলাপ যাহা মানবজাতির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে এইসব বিষয়ে খুব কমই ভূমিকা নেয়া হয়েছে। মাদক সেবন, মদ্যপান, জুয়া, সুদ, ঘুষ, ব্যাহায়াপনা, ইভটেজিং, বেশ্যলয় এবং এসিড নিক্ষেপের মত জঘন্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির আরো প্রয়োজন। 


৭। প্রশাসনের সাথে যোগাযোগের অভাব । প্রশাসনের সকল স্তরে থানার পুলিশ, ওসি, থানা নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিসি, এস পি সহ সকল স্তরের সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে নিয়মিত সৌজন্যমূলক যোগাযোগ রক্ষা করা। 
৮। সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করা । বিবাহ শাদী, মৃত ব্যাক্তিদের জানাযায় অংশগ্রহন, সামাজিক বিচার, গ্রামীণ সালিশী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণের সাথে ব্যাপক সম্পর্ক সৃষ্টি করা। 
৯। অমুসলিমদের ব্যাপারে জামায়াতের বক্তব্য জনগনের মাঝে স্পষ্ট নয়। জামায়াত বিরুধী দল ও ব্যাক্তিরা জামায়াত কে একটি সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে দেশে ও বিদেশে প্রমান করতে চায় । ব্যাপারটি বড়ই স্পর্শকাতর। লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালীয়াদিন এই নিতির ভিক্তিতে তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা। 
১০। নারী নীতির ব্যাপারে জামায়াতের বক্তব্য নারীরা অবগত নয়। ইসলাম প্রদত্ত নারীদের অধিকার সমাজের আপামর জনগনের নিকট বই পুস্তক লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে আরো স্পষ্ট করা প্রয়োজন। দেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নারীরা অংশ নিতে পারে এই ব্যাপারে জামায়াতের বক্তব্য আরো স্পষ্ট করা। 
১১। আলেমদের মাঝে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি না হওয়া । জামায়াত ভুক্ত আলেমগণ অন্য আলেমদের সাথে আরো যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। সাহাবীগণের ব্যাপারে সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর বক্তব্যের বিভ্রান্তী দূর করার চেষ্টা করা। এই ক্ষেত্রে বড় বড় ইসলামিক স্কলারদের বক্তব্যকে সামনে নিয়ে আসা। কওমি মাদ্রাসাগুলোতে জামায়াতের নেতৃবৃন্দের আরো যোগাযোগ ও যাতায়াত বৃদ্ধি করা। সমাজ গঠনে আলেমদের ভূমিকা বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বিভিন্ন মাহফিলে নিরপেক্ষ আলেমদের সম্পৃক্ত করা। দেশে ও প্রবাসে দাওয়াতী কাজের সাথে জড়িত আলেমদের সাথে সম্পর্ক গুরুত্ব ও মর্যাদা দিয়ে রক্ষা করা।
১২। ১৯৭১সালে জামায়াতের ভূমিকা জনগণের নিকট অতীব বিতর্কিত । এই বিষয়ে জামায়াতের অনেক জনশক্তি সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছুই জানেনা।এই ক্ষেত্রে দেশের জনগণ জামায়াতের ভূমিকা কতটুকু জানতে পারে ? ৭১ সালে জামায়াত পরিচয়ে যদি কোন ব্যাক্তি অপরাধমূলক কোন কাজ করে থাকে তাহলে তার ব্যাপারে জামায়াতের ব্যাবস্থা নেয়া উচিত ছিল। ভারতের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তহলে পাকিস্তানের থেকেও খারাপ অবস্থা বাংলাদেশের হবে এই আশংকার কারনে জামায়াত পাকিস্তানের পক্ষ নিলেও বক্তৃতা বিবৃতি ছাড়া যুদ্ধ অপরাধমূলক কোন জঘন্য কাজ তারা করেনি এই কথা বই পুস্তকের মাধ্যমে জনগণকে জানানো। 
১৩। জামায়াত বিরোধীদের ব্যাপারে জামায়াতের কঠোর নীতি অবলম্বন করা। যেহেতু আমরা ক্ষমতার রাজনীতি থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি। সে বিবেচনায় বিরোধী রাজনীতির সমালোচনা গঠনমূলক ও তথ্য ভিক্তিক হওয়া প্রয়োজন। কঠোর কথা না বলেও দেশের জনগণের নিকট ভালো কথা বলে গ্রহন যোগ্যতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।এ ক্ষেত্রে হিজরতের পরে রাসুল (সাঃ) এর মদিনা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি অনুসরণ করা। 
১৪। সমাজকল্যাণমূলক কাজ ব্যাপকভিক্তিক না হওয়া। গ্রাম,পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে শহর বন্দর সর্বত্র আপামর জনগণকে চিকিৎসা থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতা করা। এ ক্ষেত্রে মসজিদ ও ক্লাব কেন্দ্রীক প্রকল্প নেয়া যেতে পারে। ফেতরা ,যাকাত,দান ও ছদাকা সংগ্রহ করে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত জনগণকে সহযোগিতা করা। জাতীয় দুর্যোগে আরো যথাযথ ভূমিকা নেয়া। 
১৫। রাষ্ট্র পরিচালনায় জামায়াতের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। জামায়াত ক্ষমতা প্রাপ্তহলে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ সকল প্রকার ভালো কাজ চালু করবে। এছাড়াও সকল প্রকার খারাপ কাজ বন্ধ করবে। ইসলামী বিপ্লব নয় বরং রাষ্ট্রীয় সংস্কারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার নীতি গ্রহন করে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।
১৬। শিবির ও ছাত্রীসংস্থা থেকে আগত জনশক্তিকে জামায়াতে সরাসরি সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হওয়া। এদেরকে জামায়াতের জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা। তাদের বিবাহ-শাদী ও কর্মসংস্থানে পরিকল্পিত উপায়ে সহযোগিতা করা। 
১৭। পরিবার ও আত্নীয় স্বজনকে সম্পৃক্ত করতে না পারা। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পিত ভূমিকার প্রয়োজন। 
১৮। সংগঠনে প্রযুক্তির ব্যবহার না হওয়া। গ্লবালাইজেশনের যুগে সারা পৃথিবী নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। তথ্য আদান প্রদান সহ সকল সোশ্যাল মিডিয়াতে অবস্থান তৈরী করা অতীব জরুরী। সকল প্রকার দায়িত্বশীলদের তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যাবহারে উৎসাহিত করা। 
১৯। মিডিয়া জগতে প্রভাব না থাকা। আমাদের আরো মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব সৃষ্টি করা, শালীন নাটক ও আকর্ষণীয় চলচিত্রের মাধ্যমে সাধারন জনগণকে সমাজের সঠিক চিত্র তুলে ধরা ।তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে যাতে বিরোধী আমাদের কে বিতর্কিত না করতে পারে সেই বিষয়ে সতর্ক থাকা। 

২০। পররাষ্ট্রনীতি স্পষ্ট নয় - সকল মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করা। আন্তর্জাতিক মুসলিম সংস্থাগুলোকে আরো সক্রিয় ভূমিকা নিতে সহযোগিতা করা । কোন রাষ্ট্রের সাথেই অতি বৈরী মনোভাব পোষণ না করা। সমতার ভিক্তিতে সকল রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উদ্যেগ নেয়া।