Friday, January 24, 2014

আরব বিপ্লবের তিন বছর পূর্তিতে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত রশিদ আল ঘানুশীর সাক্ষাৎকার


ফল বিক্রেতা মোহাম্মাদ বুয়াজিজির নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ করার মধ্য দিয়ে তিউনিসিয়ায় ডিসেম্বর ১৭, ২০১০ এ ‘আরব স্প্রিং’ শুরু হয় যা গোটা আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এ ‘আরব স্প্রিং’ এর  ফলে সর্ব প্রথম তিউনিসিয়ার স্বৈরতান্ত্রিক নেতা জাইন আল আবেদীন বেন আলীর পতন হয়। বেন আলীর পতন দেখে মনে হয়েছিল যে আরব বিশ্ব কে গণতন্ত্রের ধাবিত করবে এই আন্দোলন। কিন্তু আন্দোলনের তৃতীয় বর্ষ পূর্তিতে আজ আরব স্প্রিং এর প্রাপ্তিকে খুব কম বলেই মনে হচ্ছে। ল্যালি ওয়েমাউথ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এ্যাসোসিয়েট এডিটর। তিনি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার পক্ষে আরব বিল্পবের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তিউনিশিয়ান নেতা এবং আন নাহদার প্রধান রশিদ আল ঘানুশীর এক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন যার সারাংশ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার ‘মতামত’ বিভাগে ১২ ডিসেম্বর তারিখে  প্রকাশিত হয়  (সোর্স)ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত সারাংশের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করা হলোঃ
আবু সুলাইমান
০১.প্রশ্নঃ আপনার দলের সাথে অন্য রাজনৈতিক দলের জাতীয় সংলাপের বিষয়ে যে আলোচনা চলছে- তাতে কি আপনারা একজন নতুন প্রধান মন্ত্রীর ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবেন?
ঘানুশীঃ আমার বিশ্বাস, এ সপ্তাহের মধ্যেই আমরা এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছব।
০২. প্রশ্নঃ আপনি এবং প্রধান বিরোধী দলের নেতা বেইজী সাঈদ আসেবী কি একই ব্যক্তিকে প্রধান মন্ত্রী নির্বাচিত করার বিষয়ে একমত হবেন?
ঘানুশীঃ আন নাহদা এবং নিদা টিউন তিউনিশিয়ার সবচেয়ে বড় দল। কাজেই এই দু’দলের ভেতরের ঐক্যই অন্য দলগূলোর সাথে ঐক্যমতে পৌঁছতে সহায়তা করবে।
০৩. প্রশ্নঃ  শোনা যাচ্ছে, আন নাহদা ক্ষমতা ছাড়ার জন্য ইমিউনিটি চাচ্ছে- যাতে ক্ষমতা ছাড়ার পর তার দলের নেতা কর্মীদের কাউকে বিচারের মুখোমুখি হতে না হয়।
ঘানুশীঃ না, আমরা কোন বিষয়ে ইমিউনিটি চাইনি। বরং আমাদের আলোচনার কিছু বিষয় রয়েছে। আমরা সরকার হতে পদত্যাগ করব এবং আবার টেকনোক্র্যাট সরকারে ফিরে আসব। আমরা আলোচনা করছি যাতে দেশ একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান পায় যেখানে, প্রথমত- জনগণের  স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারগুলো সংরক্ষিত হবে এবং দ্বিতীয়ত- যাতে জনগণ যথা সময়ে একটি নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন পায়। কোন ভাবেই আমরা নিজেদের জন্য কোন নিরাপত্তা গ্যারান্টি চাচ্ছিনা কারণ আমরা গত সময়ে  তেমন কোন ভুল করিনি।
০৪. প্রশ্নঃ  গত দু’বছরে আপনার শাসনামলে খুব ভালভাবে দেশ শাসন করতে পারেন নি। দেশের অর্থনীতি নাজুক। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা হুমকীর সম্মুখীন- ইতোমধ্যে দু’জন সেকুলার নেতা নিহত হয়েছে। দেশের সেনাবাহিনী আলজেরিয়া সীমান্তে জঙ্গীদের সাথে লড়াই করছে। আপনি গত শাসনামলে চরম সংকটে ছিলেন- এটা কি সঠিক নয়?
ঘানুশীঃ আমি বলছিনা যে গত দু বছরে আমরা সফল হয়েছি কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আরব বিপ্লবের পর আমরা একটি ট্রানজ়িশন পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। লিবিয়া, মিশর, ইয়েমেন, সিরিয়াসহ অন্যান্য যে সব আরব দেশে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল সে সব দেশের সাথে আমদের তুলনা করুন। তিউনিশিয়া সে হিসেবে অনেক বেটার পজিশনে আছে। চারপাশের অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে তিউনিশিয়াই আরব বিপ্লবের একমাত্র শিখাটি এখনো জ্বালিয়ে রেখেছে।
অর্থনীতির কথাই ধরা যাক। বিরোধীরা যা বলছে সেখানে কিছু অতিরঞ্জন রয়েছে। দেশের যে সকল অঞ্চল অতীতে সুবিধা বঞ্চিত হয়েছে সে সব এলাকার উন্নয়নের জন্য আমাদের বাজেটের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আরব বিপ্লবের অন্যতম কারণ ছিল সম্পদের বৈষম্য। গত ষাট বছরে এসব অঞ্চলে তেমন কোন উন্নয়ন হয় নি। আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন যে- গত দু বছর কঠোর পরিশ্রমের পর আমরা একটি সংবিধান প্রণয়নের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছি যাতে আরব বিপ্লবের যে মূলমন্ত্র-সংগঠনের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা এবং নারীর সমতা- ছিল তা প্রতিফলিত হয়েছে।
৫।  প্রশ্নঃ  এটা কি সত্য যে নারীর সমতা সংবিধানে প্রতিফলিত হবে? কারণ আপনি নারীর সমতার পরিবর্তে নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বা পুরুষের সহায়ক (Complementary) হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন।
ঘানুশীঃ এ বিষয়ে সকল বিতর্কিত আইন আমরা সংবিধান হতে দূর করেছি।
৬।  প্রশ্নঃ  কিন্তু আপনি তো এটা করেছেন চাপে পড়ে।
ঘানুশীঃ Complementary শব্দটি দুটো অর্থই বহন করে। পুরুষ যেমন নারীর সহায়ক তেমনি নারীও পুরুষের সহায়ক।
৭।  প্রশ্নঃ জমির মালিকানা কিংবা ডিভোর্সের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের ভূমিকা কী?
ঘানুশীঃ তিউনিশিয়ার আইনে যে কোন স্বামীকে এক জন নারী ডিভোর্স দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়েই সমান ক্ষমতার অধিকারী। আমাদের সংবিধান প্রণয়ন কাজ প্রায়ই শেষের দিকে এবং আমরা কোন দল বা মতের সংবিধানের পরিবর্তে জনগণের আশা-আকাংখা যাতে সংবিধানে প্রতিফলিত হয় সে জন্য গত দু বছর কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমাদের বৈদেশিক বাণিজ়্যের শতকরা ৮০ ভাগই ইউরোপের সাথে। বর্তমানে ইউরোপের অনেক দেশ যেমন ইটালি, স্পেন, ফ্রান্স চরম অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করছে এবং এর ফলে আমাদের অর্থনীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় রাখলে আমার মনে হয় – গত দু বছরে খুব খারাপ করিনি।
৮।  প্রশ্নঃ অনেকে আপনার বিষয়ে অভিযোগ করে যে, আপনি অনেক বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করেছেন এবং এ সব বিষয়ে আন নাহদার মাঝে যারা হার্ড-লাইনার তারা আপনার উপর ক্ষিপ্ত।
ঘানুশীঃ কমপক্ষে তারা আমাকে দল থেকে বিচ্যুত করেনি। কোন বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং কোন বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করতে হবে তা নিয়ে দলের মধ্যে মত-পার্থক্য রয়েছে। পার্টি কংগ্রেসে আমি কিন্তু বেন আলীর মতো ৯৯% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়নি। আমি পেয়েছিলাম ৭০% ভোট। বিভিন্ন বিষয়ে যে সকল কম্প্রোমাইজ আমাদের করতে হয়েছে তাতে বর্তমানে এই সমর্থন ৭০% এর নীচে নেমে আসতে পারে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এখনো দলের মেজরিটি আমাদের কাজ কে সমর্থন করে।
৯।  প্রশ্নঃ ২০১২ সালে আমেরিকা দূতাবাসের উপর হামলার সময় আন নাহদা পার্টির ভূমিকা খুব কম ছিল কেন? সালাফীরা যখন দূতাবাসে হামলা করে তখন আন নাহদা তাদের বিপক্ষে কোন ভূমিকা রাখেনি কেন? অভিযোগ করা হয় যে, সালাফীদের সাথে আপনার দলের সম্পর্ক থাকায় আপনারা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি এবং আপনারা বেন আলী সরকারের মত সালাফীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন নি।
ঘানুশীঃ আমরা এ আক্রমনের চরম নিন্দা করেছিলাম এবং একে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে চরম নিরাপত্তা ব্যর্থতা বলে মনে করি। এ ঘটনার পর সালাফী এবং চরমপন্থী গ্রুপ আনসার আল সালাফীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হয়েছে। এ ঘটনার পূর্বে আমরা তাদের কে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করার জন্য রাজী করানোর চেষ্টা করতাম। কিন্তু ঘটনার পর থেকে আমরা উপলব্ধি করলাম- এরা আইনী কাঠামোর ভিতর থেকে কাজ করার নয় এবং তখন থেকে আমরা তাদের বিরুদ্ধে চরম সতর্কতার সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পরবর্তীতে সরকার তাদের কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করে এবং নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বিপক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
১০. প্রশ্নঃ কখন থেকে সরকার তাদের কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করে? বিরোধী দলীয় নেতা মোহাম্মেদ ব্রাহিমী নিহত পর হবার পর নয় কি?
ঘানুশীঃ ব্রাহিমী নিহত হবার পর জুলাই মাসে তাদের কে সন্ত্রাসী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তারও এক মাস পূর্বে তাদের নেটওয়ার্ক সনাক্তকরণের কাজ শুরু হয়।
১১।  প্রশ্নঃ  তিউনিসিয়ায় কি কোন জিহাদী প্রশিক্ষণের ক্যাম্প রয়েছে?
ঘানুশীঃ না। গুজব রয়েছে যে, ইরাক, আফগানস্তান, লিবিয়া ও মালিতে তাদের ট্রেনিং ক্যাম্প রয়েছে।
১২।  প্রশ্নঃ তিউনিসিয়া কি একমাত্র রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে যেখানে আরব স্প্রিং বিজয়ী হচ্ছে? ইহা মিশরে ব্যর্থ হয়েছে। আর আরব স্প্রিং কে স্বার্থক করতে সব দলকেই কি কম্প্রোমাইজ করতে হবে?
ঘানুশীঃ আমি বিশ্বাস করি- তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র সফল হবে। আমি আরো বিশ্বাস করি, সকল দেশেই আরব স্প্রিং সফল হবে। অবাধ তথ্য-প্রবাহের এ যুগে কোন একনায়কতন্ত্রের জন্য আর টিকে থাকা সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। মিশরের ক্যু- পরবর্তী ঘটনাবলীই তার প্রমাণ।
১৩।  প্রশ্নঃ আপনি যখন দেখলেন যে, মিশরে ক্যূ সংঘটিত হচ্ছে তখন কি আপনি তিউনিশিয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলেন?
ঘানুশীঃ আমাদের বিরোধীরা কেউ কেউ অবশ্য আশা করছিলো যে, তিউনিসিয়ায় এই ঘটনা ঘটুক। কিন্তু যখন তারা জনগণের উপর সামরিক শাসকের নৃশংস হত্যাকান্ড দেখলো তখন তারা মিশরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চাইলো। আমরা মিশরে আরব স্প্রিং রপ্তানি করেছি- মিশর থেকে আমরা সামরিক ক্যূ আমদানি করতে চাইনা। আমি আশা করি, গণতন্ত্রে উত্তরণের যে সফলতা তিউনিসিয়া লাভ করবে তার মাধ্যমে আমরা মিশরে কার্যকর গণতন্ত্রের একটি মডেল উপহার দিতে পারব।
১৪।  প্রশ্নঃ  অনেকে অভিযোগ করেন, মিশরে মুরশী কিছু ভুল করেছিলঃ যেমন- নিজেকে বিচারের মুখোমুখি থেকে সুরক্ষা প্রদান, সেক্যুলার গ্রুপের সাথে আলোচনা করতে অস্বীকার ইত্যাদি। এগুলোকে আপনি কিভাবে দেখেন?
ঘানুশীঃ হাঁ, মুরসী কিছু ভুল করেছিল। কিন্তু তার অজুহাতে কোন ভাবেই সামরিক শাসন বৈধতা পেতে পারেনা। আর মুরশী যে ভুলই করুক না কেন- তার জন্য মিশরে যে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে তা দেখে পশ্চিমাদের নীরবতা মেনে নেয়া যায় না।
১৫।  প্রশ্নঃ এখানে পশ্চিমা বলতে কী আমেরিকা কে বুঝাচ্ছেন?
ঘানুশীঃ মিশরে এই গণহত্যা, নির্যাতন ও স্বৈরতন্ত্রের বাস্তবায়ন দেখেও কোন ভাবেই পশ্চিমাদের নিশ্চুপাবস্থা ঠিক নয়।
১৬।  প্রশ্নঃ কিন্তু মুরসী নিজেকে আইনের উর্দ্ধে স্থাপন করেছিল, সে অন্যদের সাথে আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছিল?
ঘানুশীঃ মুরশী সম্পর্কে আমরা যাই বলিনা কেন- এবং সে গুলো যদি সঠিক ও হয়- তারপরও কোন একটি হত্যার ঘটনা ঘটেনি কিংবা একজন সাংবাদিককেও জেলে যেতে হয়নি। বর্তমানে মিশরে মিডিয়া সামরিক শাসক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এবং তাদের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে।
১৭.প্রশ্নঃ প্রেসিডেন্ট মুরসীর সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?
ঘানুশীঃ হাঁ, আমি তাকে চিনি এবং তাঁকে আমি সম্মানও করি।
১৮।  প্রশ্নঃ  আপনি কি ‘ইন্টারন্যাশন্যাল মুসলিম ব্রাদারহূড’ এর রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নন?
ঘানুশীঃ না। আপনি বোধ হয় ‘ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারস’ এর কথা বলছেন। এটি রাজনৈতিক কোন সংস্থা নয়।
১৯. প্রশ্নঃ এটা পরিচালিত হয় শাইখ ইউসুফ আল কারযাভী দ্বারা [মুসলিম ব্রাদারহূডের তিনি একজন অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী]।
ঘানুশীঃ তিউনিশিয়া যে কেবল মাত্র ভাগ্যচক্রে ‘আরব স্প্রিং’ এর জন্মদাতা তা নয়। আমি বিশ্বাস করি, তিউনিসিয়া একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক কাঠামো উপহার দিতে সক্ষম হবে- কারণ তিউনিসিয়ার রয়েছে একটি হোমোজেনাস সোসাইটি যেখানে রয়েছে খুব কম সংখ্যক ইহুদী। তিউনিসিয়ায় শিক্ষার হার বেশি। আমাদের রয়েছে গণতন্ত্রের সমর্থক একটি বৃহত্তর মধ্যবিত্ত শ্রেণী। আমাদের রয়েছে একটি বৃহত্তম মডারেট ইসলামিক পার্টি যারা ইসলাম ও গণতন্ত্রের সহাবস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রগামী।
আমরা একা একা সংবিধান রচনা করতে পারতাম কিন্তু আমরা করিনি। কারণ আমরা চেয়েছিলাম সংবিধান শুধু ইসলামপন্থীদের দ্বারা রচিত না হয়ে সকলের অংশগ্রহণে রচিত হোক। নির্বাচনের পর আমরা শুধু ইসলামপন্থীদের সাথে নয় বরং সেক্যুলারসহ সকল দলের সাথে মিলে যৌথ সরকার গঠন করতে চেয়েছিলাম কারণ আমরা এটা জনগণের এই বার্তা দিতে চেয়েছিলাম যে- ‘রাষ্ট্র সকলের’।
২০. প্রশ্নঃ অনেকে বিশ্বাস করে যে, আন নাহদা কোন মডারেট দল নয়- বরং এর রয়েছে গোঁড়া ইসলামিক এজেন্ডা।
ঘানুশীঃ অনেকে আন নাহদার বিষয়ে জনগণকে ভয় দেখাতে চায়। তারা বলে যে, আন নাহদা ক্ষমতায় আসীন হলে সবাই কে ‘বোরখা’ (impose strict dress rules) পরতে বাধ্য করবে। কিন্তু আপনি যদি রাস্তা দিয়ে হাটেন দেখবেন যে, মহিলাদের মধ্যে যারা পছন্দ করে তারা স্কার্ফ পরছে, যারা পছন্দ করেনা তারা পরছেনা। আন নাহদা ক্ষমতায় আসলে পশ্চিমাদের সাথে সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে বলে বিরোধীরা পশ্চিমাদের ভয় দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু দু বছর পর দেখা যাচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার সাথে আমাদের সম্পর্কের আরো উন্নতি হয়েছে।
২১.প্রশ্নঃ ২০১১ সালে আপনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে- ঈসরাইল ধবংস হতে যাচ্ছে। আপনি কি এখনো চান যে, এটা সত্য হোক?
ঘানুশীঃ এ কথা জীবনে আমি প্রথম শুনলাম।
২২. প্রশ্নঃ  ঈসরাইলের বিষয়ে আপনি কি ভাবেন?
ঘানুশীঃ এখানে একটি সমস্যা রয়েছে যা এখনো অমীমাংসিত। এখনে জবর-দখলের সমস্যা বিদ্যমান। আমি যতটুকু জ্ঞাত সে অনুযায়ী- ঈসরাইল অতীতে যেমন ইয়াসির আরাফাতের সাথে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে তেমনি ব্যর্থ হয়েছে বর্তমানে আবু মাজেন (মাহমুদ আব্বাস) এর সাথে ঐকমত্যে পৌঁছাতে । আমরা জেনেছি, এমনকি হামাসও ‘দ্বি-রাষ্ট্র’ (Two Nations) সমাধান পদ্ধতি সমর্থন করছে; কিন্তু আমরা ঈসরাইল কে সামনে অগ্রসর হতে দেখছিনা।
২৩. প্রশ্নঃ  তাহলে কী আপন বলতে চান- আপনি ইসলামি শরীয়াহ্‌র ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন না?
ঘানুশীঃ ১৯৫৯ সালের র‌্যাটিফাইডকৃত সংবিধান যা বর্তমানে চালু রয়েছে সেটি অনুযায়ী- তিউনিসিয়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্র-যার ধর্ম ইসলাম এবং ভাষা আরবী (Islam is its religion and Arabic is its language)। এটি আমাদের জন্য যথেষ্ট। গণতন্ত্রে পার্লামেন্ট আইন তৈরী করে। আমরা থিওক্রেসি কে পার্লামেন্ট এর উপরে রাখতে চাই না। আমদের কিছু লোক শরীয়াহ্‌ কে সংবিধানে যোগ করার আহবান করেছিল। কিন্তু আমরা সে আহবান প্রত্যাখ্যান করেছি। জনগণ শরীয়াহ্‌র ব্যাপারে সর্বসম্মত নয়। কাজেই বিষয়টিকে সংবিধানের বাইরে রাখাই উচিৎ।
২৪. প্রশ্নঃ বিরোধী দলীয় সেক্যুলার নেতা মোহাম্মদ ব্রাহিমি ও চকোরি বেলাদি কে যারা হত্যা করেছিল তাদের বন্দী করার ব্যাপারে কোন ভুমিকা নেয়া হয়নি কেন?
ঘানুশীঃ যারা হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করেছিল তাদের অনেককেই নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেফতার করেছে। আর এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল পেশাদার কিলারদের দ্বারা-কাজেই তাদের সনাক্ত করা কঠিন ছিল। তাছাড়া এটা এখনো স্পষ্ট নয় কারা তাদেরকে হত্যা করেছিল।
২৫।  প্রশ্নঃ কখন এবং কেন আপনি পার্টি গঠন করেছিলেন?
ঘানুশীঃ ১৯৮১ সালে আমি তিউনিসিয়ায় আমি দল গঠন করেছিলাম। এ দল এখন দেশের প্রধান বিরোধী দল।
২৬।  প্রশ্নঃ আপনি যখন দল গঠন করেন তখন কী ঘটেছিল?
ঘানুশীঃ সরকার আমাকে ১৯৮১ সালে জেলে প্রেরণ করে এবং এগার বছর কারাদন্ড ঘোষণা করে । প্রেসিডেন্ট হাবিব বরগুইবা ভেবেছিল আমি তাকে ও তার সরকার কে ইনসাল্ট করেছিলাম এবং আমি জনগণকে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ইন্ধন যুগিয়েছিলাম।
চার বছর জেলে খাটার পরে আমি মুক্তি পায়। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আমি দলের কাজ আবার শুরু করি। ১৯৮৭ সালে আমাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয় এবং আজীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। একবার তো আমার বিপক্ষে মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা প্রায়ই হয়েই গিয়েছিল। হাবিব বরগুইবা চেয়েছিল আমাকে মৃত্যদন্ড দিতে। কিন্তু ভাগ্যচক্রে ঠিক তখনই তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং আমি ১৯৮৮ সালে জেল থেকে ছাড়া পায়।
২৭. প্রশ্নঃ  তারপর?
ঘানুশীঃ ১৯৮৯ সালে সাধারণ নির্বাচন সংঘটিত হয়। সে নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করি। তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী বেন আলী কারচুপির আশ্রয় নিয়ে ফলাফল কে পালটে দেয়ার এবং আমাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করার পরিকল্পনা করেন। ফলে আমি দেশ ত্যাগ করি। আমি বিদেশ থেকেই বেন আলীর বিরুদ্ধে আমার আন্দোলন অব্যাহত রাখি। এমন কি আরব স্প্রিং এর এই বিপ্লব পুর্ব পর্যন্ত আমার এ আন্দোলন বজায় ছিল।
২৮।  প্রশ্নঃ  আপনি কেন প্রধান মন্ত্রী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন?
ঘানুশীঃ তরুণ-যুবকদেরকে এবং যারা আমার চাইতে বেশি কষ্ট ভোগ করেছে আমি তাদেরকে সূযোগ দেয়া পছন্দ করি। বর্তমান প্রধান মন্ত্রী আলী লারায়েধের বিরুদ্ধে দু’বার মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হয়।
পাদটীকাঃ মূল পোস্টের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে। তবে পড়ার সুবিধার্থে শুধু ক্রমিক নম্বর দেয়া হয়েছে যা মূল পোস্টে ছিলনা।